জাতীয়করণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা। বুধবার (২৯ অক্টোবর) তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে ঘোষণা দেন, তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলিয়ে যাবেন। এই আন্দোলন শুরু হয়েছে শিক্ষকদের অধিকার রক্ষা এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা কার্যক্রমের জাতীয়করণের দাবিতে।
প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকরা হুঁশিয়ারি দেন, তারা কঠোর কর্মসূচি নিতে প্রস্তুত এবং কোনোভাবে আন্দোলন থামানো হবে না।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
দাবি পূরণের আশ্বাস না পাওয়ায় বুধবার দুপুরে শিক্ষকরা সচিবালয়ের দিকে মিছিল করে পদযাত্রা শুরু করেন। পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম জানান, “পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করেছে। অধিকাংশ শিক্ষক রাস্তা ছাড়লেও অল্প কিছু শিক্ষক এখনও বসে অবস্থান করছেন।”
সংঘর্ষের পর প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে আহত ৪৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে তারা পুনরায় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন।
শিক্ষকরা অনড়
সংঘর্ষ সত্ত্বেও শিক্ষকরা দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, তাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র শিক্ষার মান উন্নয়ন নয়, বরং ইবতেদায়ী শিক্ষার স্বীকৃতি ও জাতীয়করণ নিশ্চিত করা। তারা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তাদের দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত হবে না।
শিক্ষকরা আরও বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি জানাচ্ছি। সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
আন্দোলনের ইতিহাস
পাঁচ দফা দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া এই আন্দোলন প্রায় ১৭ দিন ধরে চলে আসছে। শিক্ষকেরা পূর্বে বিভিন্ন সভা, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। এই আন্দোলন শিক্ষকদের সামাজিক ও পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে সংগঠিত হয়েছে।
এর মধ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত সমাধান হয়নি।
পুলিশের অবস্থান
পুলিশ জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য। রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, “আমরা চাই শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানান এবং কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটানো থেকে বিরত থাকুন।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় প্রস্তুত রয়েছে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
শিক্ষক আন্দোলনের ফলে রাজধানীর কিছু এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ব্যাপক আলোচনাও শুরু হয়েছে। সাধারণ নাগরিক এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে পদক্ষেপ গ্রহণে প্ররোচিত করবে।
ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা তাদের দাবিতে অনড়। পুলিশি সংঘর্ষ সত্ত্বেও আন্দোলন চলমান এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবি আদায়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্দোলন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সরকারের পদক্ষেপ কখনোই শিক্ষকদের দাবি মেনে নেবে কি না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর উত্তর আগামী কয়েক দিনে আরও স্পষ্ট হবে।
এম আর এম – ১৯৯৫,Signalbd.com



