আঞ্চলিক

জামায়াত আমীরের বিরুদ্ধে কটূ মন্তব্য করায় গাজীপুরের সেই ওসি ক্লোজড

Advertisement

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পূবাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. আমিরুল ইসলাম (মুরাদ) কে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহিদ হোসেন ভূঞা স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এটি কার্যকর করা হয়।

ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে নিয়ে করা কটূ মন্তব্যের কারণে। অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, এই মন্তব্য প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে এবং ওসির রাজনৈতিক পক্ষপাত প্রকাশ পায়।

অভিযোগের বিস্তারিত

সোমবার পূবাইল থানার জামায়াতের নায়েবে আমীর মোহাম্মদ শামীম হোসেন মৃধা এবং গাজীপুর মহানগর মজলিসে শূরার সদস্য অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন খান লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওসি আমিরুল ইসলাম একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “জামায়াতের লোকেরা স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে কি না, সেটার জন্য গণভোট হওয়া প্রয়োজন।” অভিযোগকারীরা মন্তব্যের স্ক্রিনশট এবং কিছু ভিডিও প্রমাণ হিসেবে সংযুক্ত করেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমীর সম্প্রতি একটি বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সনদ স্বাক্ষরের দিনেও জুলাই যোদ্ধাদের আবার আন্দোলনে নামতে হয়েছে, যা লজ্জাজনক। এ বক্তব্যের পর ওসির মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

পূবাইল থানা জামায়াতের আমীর আশরাফ আলী কাজল বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এ ধরনের মন্তব্য করা ঠিক নয়। তিনি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (ভারপ্রাপ্ত) কমিশনার জাহিদুল হাসান জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়ে একজন অতিরিক্ত ডেপুটি ইনস্পেক্টরকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সরকারি কর্মকর্তার এমন প্রকাশ্য মন্তব্য প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তার রাজনৈতিক মন্তব্য প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও জনবিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এর ফলে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরা দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা উদঘাটনের দাবি তুলেছেন। তারা মনে করেন, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত রোধ করা জরুরি।

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

ওসি আমিরুল ইসলাম ও তার মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, সরকারি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির উচিত রাজনৈতিক দল বা নেতাদের বিষয়ে মন্তব্য না করা।

এ বিষয়ে পূবাইল থানার আশপাশের বাসিন্দাদেরও উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। তারা মনে করেন, সরকারি কর্মকর্তার এমন মন্তব্য সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

গাজীপুরের পূবাইল থানার ওসি আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে লেখা অভিযোগ এবং পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার ঘটনা দেশের প্রশাসনিক শৃঙ্খলার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে। এটি সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

তবে ভবিষ্যতে এই ঘটনার প্রভাব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেমন হতে পারে তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ১৯৮৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button