আঞ্চলিক

হিজাব নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের প্রতিবাদে ‘ইসলামি লেবাসে’ ক্লাস নিলেন রাবি শিক্ষক

Advertisement

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি হিজাব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। পোস্টে তিনি নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, মদ ও টু-কোয়ার্টারসহ অন্যান্য বিষয়েও স্বাধীনতা রয়েছে। এই মন্তব্যকে অনেকেই বিতর্কিত ও অনৈতিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

পোস্টের কারণে সোমবার দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে মঞ্চে সমাবেশ ও বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক কর্মসূচি চালান।

‘ইসলামি লেবাসে’ ক্লাসের ঘটনা

এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান ইসলামি লেবাসে ক্লাস নেন। তিনি আল-কোরআন বুকের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ইসলামি পোশাক পরিধান করে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হন।

ড. মনিরুজ্জামান বলেন, “যে ব্যক্তি যে ধর্ম পালন করে, সে তার ধর্মীয় পোশাক ও আচরণের ক্ষেত্রে স্বাধীন। যদি কেউ হিন্দু হন, তাহলে ধুতি পরে ক্লাসে যাওয়ার স্বাধীনতা তার আছে। আমি একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামী বিধান অনুসারে আমার পোশাক ও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে ক্লাসে আসার অধিকার রাখি।” তিনি আরও বলেন, “একজন শিক্ষককে সমাজের বিবেক হিসেবে ধরা হয়। এমন অনৈতিক বা অসংগত আচরণ আশা করা যায় না। বিশ্বের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একজন শিক্ষক মদ নিয়ে ক্লাসে যেতে পারেন না। আমি সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

ড. মনিরুজ্জামানের এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশংসা ও সমর্থন সৃষ্টি করে। অনেক শিক্ষার্থী বলেন, এটি শিক্ষকের নৈতিক দায়বোধ ও সামাজিক দায়িত্বের উদাহরণ। বিশেষ করে নারীরা এই ঘটনাকে উৎসাহজনক হিসেবে দেখেছেন, কারণ এটি হিজাব ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

এক শিক্ষার্থী জানান, “শিক্ষকরা শুধু পাঠদান করেন না, তারা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দিকনির্দেশনা দেন। আজকের এই ঘটনা সেই দায়িত্বের প্রতিফলন।”

প্রতিযোগী ও সমালোচকদের মন্তব্য

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, তার পোস্টের উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর আলোকপাত করা, কিন্তু তা ভুলভাবে ব্যাখ্যা হয়েছে। শিক্ষক ও সমাজের মধ্যে বিতর্ক উত্তপ্ত হলেও, এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের সচেতনতা এবং শিক্ষকের নৈতিক উদাহরণের আলোকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচিত সমাজে নৈতিকতা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বজায় রাখা। আরবি বিভাগের এই উদাহরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সাহায্য করছে।

সামাজিক ও শিক্ষাবিদ দৃষ্টিকোণ

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষক সমাজে নৈতিক ও শিক্ষাগত দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো শিক্ষক যদি সমাজের নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক আচরণ দেখান, তা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও নৈতিক প্রভাবিত করতে পারে।

ড. মনিরুজ্জামানের এই পদক্ষেপ দেখিয়েছে যে, একজন শিক্ষক সমাজের নৈতিক দায়িত্ববোধ ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত পরিবেশ রক্ষা করতে সক্ষম। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা, মর্যাদা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার মূল্য বোঝাতে সহায়ক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা শিক্ষা এবং সামাজিক দায়বোধের এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হিজাব ও ধর্মীয় পোশাক নিয়ে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, শিক্ষক সমাজের নৈতিকতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।

শিক্ষার্থীরা এখন আরও সচেতন ও আত্মনির্ভরশীল হতে পারছে, আর শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ববোধ ও উদাহরণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন উদাহরণ আরও সচেতনতা ও সামাজিক নৈতিকতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এম আর এম – ১৯৭৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button