গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এলাকায় একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আলমগীর লস্কর (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আরও পাঁচজন পথচারী আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে গোপালগঞ্জ-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের রামচন্দ্রপুর এলাকায়।
নিহত আলমগীর লস্কর টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকার মৃত মঈন উদ্দিন লস্করের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি রামচন্দ্রপুর বটতলা মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ পড়ার পর সড়ক পার হচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত
টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, পিরোজপুর থেকে ছেড়ে আসা “ওয়েলকাম এক্সপ্রেস” নামের একটি যাত্রীবাহী বাস আলমগীর লস্করকে বাঁচাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টো যায়। এতে ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধ নিহত হন এবং আরও পাঁচজন আহত হন।
দুর্ঘটনার পর আধাঘণ্টা গোপালগঞ্জ-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত বাস সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বাসের চালক ও হেলপার দুর্ঘটনার পর পালিয়ে গেছেন।
আহতদের অবস্থা ও চিকিৎসা
অভিযুক্ত আহত পাঁচজনকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য তাদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন। তাদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে যথাযথ মেডিকেল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশি প্রতিবেদনে জানা গেছে, মহাসড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণহীন এবং দ্রুতগতিতে বাস চলাচল করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কের ভাঙা অংশ এবং প্রতিরোধক ব্যবস্থা না থাকাও এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে।
ওসি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, “বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন। তাদের খুঁজে বের করা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের দুর্ঘটনা পুনরায় না ঘটানোর জন্য সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।”
গোপালগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকায় গত কয়েক বছরে দ্রুতগতির বাস ও যাত্রীবাহী যানবাহনের কারণে নানান দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সড়ক পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীরা নিয়মিত ঝুঁকিতে থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য ট্রাফিক পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য। এছাড়া, বাস চালকদের জন্য নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি এবং নিরাপদ গতির নিয়ম মানা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত বাস সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা বাসের অতিরিক্ত গতিবেগ এবং সড়ক নিরাপত্তার অভাবের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, রাস্তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হলে এমন দুর্ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে।
বিশ্লেষণ ও পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন দ্রুতগতি, পথচারীদের জন্য নিরাপদ পারাপারের অভাব এবং সড়কের দুর্বল অবকাঠামো এই ধরনের দুর্ঘটনার মূল কারণ।
প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। সরকারের উচিত সড়ক নিরাপত্তা, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাত্রীবাহী বাসচাপায় বৃদ্ধ আলমগীর লস্করের মৃত্যু একটি মারাত্মক ঘটনা। একই ঘটনায় আহত পাঁচজনের দ্রুত এবং সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।
সড়ক নিরাপত্তা, সচেতনতা এবং প্রশাসনের তৎপরতা ছাড়া ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধ করা কঠিন। সাধারণ জনগণকে সড়ক পারাপারে সতর্ক থাকা এবং গাড়ি চালকদের জন্য নিরাপদ গতি মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজন।
এম আর এম – ১৯৭৭,Signalbd.com



