ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি সিটির, ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ
রোববার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সাভারে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি একটি গায়ে থুতু লাগার ছোটোখাটো ঘটনায় শুরু হলেও তা দ্রুত ব্যাপক তাণ্ডবের আকার নেয়। সংঘর্ষের পর উভয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে। আবাসিক শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে হল ছেড়ে চলে গেছেন।
সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অপরদিকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় সিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের শিক্ষার্থীদের ঘটনার জন্য দায়ী করছে।
সংঘর্ষের সূচনা ও ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসার পাশেই বসেছিলেন সিটির ছাত্ররা। এ সময় একজন শিক্ষার্থী থুতু ফেললে তা গিয়ে লাগে মোটরসাইকেলে থাকা ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর গায়ে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং কিছুক্ষণ পর সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষ থেমে গেলেও সোমবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় দুটি থমথমে অবস্থায় ছিল। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে হল ছাড়তে শুরু করেন।
প্রশাসনিক ক্ষয়ক্ষতি ও অভিযোগ
সাভারের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন পরিদর্শন করলে দেখা গেছে কাচের টুকরা ছড়িয়ে, আসবাব ভাঙা ও ১৫টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লুৎফর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ড্রোন দিয়ে নজরদারি করে হামলা চালানো হয়েছে। এসি ও কম্পিউটারও খুলে নেওয়া হয়েছে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী হামলার সূচনা এবং পরিকল্পিত আক্রমণের মূল উদ্যোগ সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রদের অংশগ্রহণে হয়েছে।
সিটি বিশ্ববিদ্যালয় দাবী করছে, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উভয়পক্ষ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন।
সংঘর্ষের প্রভাব ও শিক্ষার্থী পরিস্থিতি
সংঘর্ষের প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এক সপ্তাহ পর সীমিত আকারে ক্লাস শুরু করা গেলেও পুরো একাডেমিক কার্যক্রম সচল হতে মাস খানেক সময় লাগতে পারে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, আতঙ্কের কারণে ছাত্রছাত্রীরা হল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কলেজ ক্যাম্পাসে সাধারণ কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও প্রভাবিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক বিশ্লেষণ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকরা মনে করছেন, ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উসকানি হতে পারে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করেছে, কোনো যোগসূত্র ছাড়াই রাতের অন্ধকারে শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ধরনের সংঘর্ষের মূল উদ্দেশ্য সামাজিক ও শিক্ষামূলক পরিবেশে অশান্তি সৃষ্টি করা। তাই উভয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্কতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগোতে হবে।
সামগ্রিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘর্ষ শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক পর্যায়ে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি করতে পারে। আগামী কয়েকদিন পরিস্থিতি ক্রমে স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও নিরপেক্ষ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা না হলে পুনরায় উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।
উভয় বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার মূল উৎস চিহ্নিত করে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পুনরায় সচল করতে হবে।
এম আর এম – ১৯৬৬,Signalbd.com



