ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রশাসন প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ফারুক শাহ জানিয়েছেন, হলের সকল শিক্ষার্থীর জন্য স্বচ্ছ, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, হল প্রাঙ্গণে ধূমপান করতে দেখা গেলে সরকারি আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হবে। এছাড়া, যদি কোনও শিক্ষার্থীর কাছে মাদকদ্রব্য সেবন বা সংরক্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে অভিভাবকের উপস্থিতিতে হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নতুন নিয়মের প্রয়োজনীয়তা
হল প্রাঙ্গণে ধূমপান ও মাদক সেবনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফারুক শাহ বলেন, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে, প্রাঙ্গণ বা ক্যান্টিনের সামনে অনেকে ধূমপান করেন। এতে হলের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয় এবং অধূমপায়ীদের জন্য সমস্যা তৈরি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সতর্ক করতে চাই। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে ধূমপান করতে চায়, তবে সেটা অন্যদের ক্ষতি না করে করতে হবে। এই কারণেই নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে।”
ধূমপান ও মাদকবিরোধী পদক্ষেপের বিস্তারিত
নোটিশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, হল প্রাঙ্গণে ধূমপান করা মানেই জরিমানা। এছাড়া ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে অভিভাবকের উপস্থিতিতে বহিষ্কার করা হবে। এই পদক্ষেপ মূলত হলের সকল শিক্ষার্থীর জন্য শান্তিপূর্ণ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে।
প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ও শিক্ষণমুখী পরিবেশে রাখা। হল প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, কেউ যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে, তবে গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের পর প্রযোজ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূর্ববর্তী ধূমপান নিয়ন্ত্রণ নীতি
ঢাবির বিভিন্ন হলে ইতিমধ্যেই ধূমপান ও মাদকবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এফ রহমান হল আগে থেকেই এই নিয়ম প্রয়োগ করেছিল। জহুরুল হক হলে এই পদক্ষেপ প্রথম নয়, তবে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা এবং জরিমানা আরোপ নতুন দিক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য হল হল প্রাঙ্গণের নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইদুল কাদের বলেন, “দোকানে খেতে গিয়ে দেখি অনেকে পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছে। এটা বিরক্তিকর। হল প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কারো সিগারেট খাওয়া হলে নিজ দায়িত্বে হবে, যাতে অন্যদের ক্ষতি না হয়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, “হল প্রাঙ্গণ বলতে কী বোঝায়, এটা বিবৃতিতে স্পষ্ট হয়নি। তবে মনে হয় না, হলে কেউ সিগারেট খেয়ে কারো ক্ষতি করছে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কিছুটা হস্তক্ষেপ হলেও, নতুন নিয়ম সচেতনতা বাড়াবে।”
প্রশাসনিক নজরদারি ও বাস্তবায়ন
হল প্রশাসন জানিয়েছে, নিয়ম লঙ্ঘন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি ধূমপান বা মাদক সেবনের প্রমাণ দেখে, তবে তা প্রশাসনের নিকট জানানো উচিত। প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া হলের শিক্ষা ও সামাজিক পরিবেশ উন্নত হবে।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক মতামত
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উচ্চশিক্ষার পরিবেশে ধূমপান ও মাদকবিরোধী পদক্ষেপ শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করা এবং জরিমানা ধার্য করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ বাড়াবে। এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ যা শিক্ষার মান উন্নত করবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের এই নতুন পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়োজিত। ধূমপান ও মাদক সেবন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বাড়াতে চাইছে।
যেহেতু এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন আচরণকে প্রভাবিত করবে, তাই অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াতে এর প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্য হবে। আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও সমন্বয় বৃদ্ধিতে এটি একটি ধাপস্বরূপ উদ্যোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এম আর এম – ১৯৬৫,Signalbd.com



