আঞ্চলিক

১২ বছর জেল খেটে বের হওয়া যুবদল কর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

Advertisement

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় দিনের বেলায় নিজের বাড়ির অদূরে প্রকাশ্যে এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত মোহাম্মদ আলমগীর স্থানীয় যুবদল কর্মী ছিলেন এবং সম্প্রতি ১২ বছর জেল খেটেছিলেন। হত্যাকাণ্ডটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার বিস্তারিত

শনিবার বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল এলাকায় রশিদারপাড়া সড়কে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আলমগীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আত্মীয়ের বাড়িতে দুপুরের খাবার শেষ করে মোটরসাইকেল চালিয়ে ফেরার পথে নির্মমভাবে খুন হন।

রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানিয়েছেন,

“মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা একদল দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হত্যার পর দুর্বৃত্তরা আলমগীরের মোটরসাইকেলও নিয়ে যায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিহতের চারপাশে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় দুটি জোড়া জুতা পাওয়া গেছে, যা হত্যার পরিকল্পিত প্রকৃতি প্রমাণ করছে।

নিহতের রাজনৈতিক পরিচয় ও পূর্বপরিস্থিতি

মোহাম্মদ আলমগীর ছিলেন রাউজান পৌরসভা যুবদলের কর্মী। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন মামলায় তিনি প্রায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন এবং স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিলেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একদিকে আছেন গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা এবং অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা। দুই পক্ষই সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে রাউজানে এক ডজনের বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

পুলিশি মন্তব্য ও তদন্ত

ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানিয়েছেন, “

নিহত ব্যক্তি যুবদল কর্মী ছিলেন, কোনো পদ-পদবি ছিল না। রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকলকে শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। স্থানীয় জনগণ নিরাপত্তার অভাবে আতঙ্কিত রয়েছে।

রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া

গোলাম আকবর খোন্দকার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “রাউজানের যুবদল নেতা মোহাম্মদ আলমগীর সম্প্রতি কারামুক্ত হওয়ার পর এই অস্থিতিশীল এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। যারা এই হত্যার সঙ্গে যুক্ত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।”

অন্যদিকে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন, “স্থানীয়রা আলমগীরকে আলইম্যা ডাকাত নামে চিনতেন। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় বিএনপি বা যুবদলের সাথে সম্পর্কিত কিনা তা নিশ্চিত নয়। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হবে।”

হত্যাকাণ্ডের প্রভাব

এই হত্যাকাণ্ড রাউজানের সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে আরও সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সামাজিক অস্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাবোধ ক্ষুণ্ণ করে।

রাউজানের রশিদারপাড়া এলাকায় যুবদল কর্মী মোহাম্মদ আলমগীরের নির্মম হত্যা শুধুই একটি ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন। ঘটনার তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতারা আশা করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত হত্যাকারীদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করবে।

এম আর এম – ১৯৪১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button