নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মদপুর বাজারের একটি গোডাউনে প্রায় সাড়ে ১৩ টন গুলির খোসা মজুদ থাকার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি যাচাই করছে।
ঘটনাস্থল ও উদ্ধারকাজ
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোডাউনে গুলির খোসা দেখে তারা প্রথমে স্থানীয় পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী দ্রুত গোডাউনে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। গোডাউনের মালিক সিহাব উদ্দিনের দাবি, তিনি রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস থেকে স্ক্র্যাপ হিসেবে এক ব্যবসায়ীর নিলামে গুলির খোসা ক্রয় করেছেন।
মোটামুটি ১৩.৫ টন খোসা ৪০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এই খোসাগুলো প্রধানত ধাতু পুনঃব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছিল।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, “আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছি। ব্যবসায়ীর কাছে থাকা কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। সবকিছু যাচাই বাছাইয়ের পরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গোডাউনের মালিক ও তাদের ব্যাখ্যা
সিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, তার বাবা-মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ এই গোডাউনের মালিক। তিনি জানান, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তারা এই পরিমাণ গুলির খোসা ক্রয় করেছেন এবং এটি সম্পূর্ণ বৈধ প্রক্রিয়ায় কেনা হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে কেন এত বড় পরিমাণ গুলির খোসা গোডাউনে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ উদ্বিগ্ন যে এটি অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। এই কারণে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী গোডাউনের কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে যাচাই করছে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ ও তদন্ত
ওসি গোলাম সারোয়ার হোসেন আরও জানান, “এখন পর্যন্ত কোনো অবৈধ কার্যকলাপের প্রমাণ মেলেনি। আমরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে থাকা কাগজপত্র এবং নিলাম সংক্রান্ত ডকুমেন্ট যাচাই করছি। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীও আমাদের সহযোগিতা করবে।”
প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, গুলির খোসা একটি বৈধ নিলাম থেকে ক্রয় করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে এটি ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা বলেছেন, তারা প্রথমে এই খোসা দেখে আতঙ্কিত হন। অনেকে আশঙ্কা করেছেন, এটি অবৈধ অস্ত্রসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের অংশ হতে পারে। কিন্তু ব্যবসায়ীর ব্যাখ্যা শুনে অনেকেই শিথিল হয়েছেন।
একাধিক স্থানীয় নেতার মতে, “প্রতিটি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য যথাযথ অনুমোদন থাকা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সব যাচাই করে তবে আমাদেরও শান্তি মিলবে।”
পূর্ব অভিজ্ঞতা ও তুলনা
বাংলাদেশে এর আগেও কিছু ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ গুলির খোসা বা অব্যবহৃত অস্ত্রাংশ পাওয়া গিয়েছে। তবে সচরাচর এগুলো বৈধ নিলাম বা পুনঃব্যবহারযোগ্য ধাতু হিসেবে ক্রয় করা হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুলির খোসা বৈধ উৎস থেকে কিনলে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে বড় পরিমাণের অবস্থান থাকলে প্রশাসনের তদারকি স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “গুলির খোসা পুনঃব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধাতু সংগ্রহ এবং শিল্পে ব্যবহার করা যায়। তবে, সরকারি অনুমোদন ছাড়া যদি এটি সংরক্ষণ করা হয়, তা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, “বড় পরিমাণ গুলির খোসা সংরক্ষণে যথাযথ নথিপত্র থাকা আবশ্যক। এটি না থাকলে প্রশাসন অভিযান চালাতে পারে। এখানে ব্যবসায়ীর অনুমোদিত নিলাম হওয়ায় প্রাথমিকভাবে ঝুঁকি নেই।”
নাটোরে আহম্মদপুর বাজারের গোডাউনে সাড়ে ১৩ টন গুলির খোসা পাওয়া চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন হলেও, ব্যবসায়ী ও প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী এগুলো বৈধ নিলাম থেকে ক্রয় করা হয়েছে।
পুলিশ এবং সেনাবাহিনী বিষয়টি যাচাই করছে এবং কাগজপত্র যাচাই শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই ঘটনার মাধ্যমে বড় পরিমাণ গুলির খোসা সংরক্ষণ এবং বৈধতার বিষয়টি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
প্রশাসনের সতর্কতার মাধ্যমে স্থানীয়দের শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে তদন্তের ফলাফলের ওপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এম আর এম – ১৯৩৪,Signalbd.com



