
গাইবান্ধায় এক পুলিশ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এসআই মনিরুজ্জামানের স্ত্রী কাজলী খাতুন বাদী হয়ে মামলা করেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মনিরুজ্জামানকে ডেকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত মোবাইল, ল্যাপটপ ও নগদ টাকা জব্দ করে এবং ভয়ভীতি প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে।
মামলা ও অভিযোগের বিস্তারিত
মামলা দায়েরের সময় জানা যায়, ভুক্তভোগী এসআই মনিরুজ্জামান গাইবান্ধা সদর থানায় কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী কাজলী খাতুন বাদী হয়ে বুধবার (২২ অক্টোবর) গাইবান্ধা সদর আমলী আদালতে মামলা করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন গাইবান্ধা পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত এ্যঞ্জেলা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার এবং লালমনিরহাট জেলার তারেকুজ্জামান তুহিন।
মামলায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৫ মার্চ এসপি ও ওসি মনিরুজ্জামানকে ডেকে পাঠান। এসআই কার্যালয়ে প্রবেশ করলে তার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং ১৩ হাজার টাকা জোরপূর্বক জব্দ করা হয়। পরে মোবাইল ও ল্যাপটপ যাচাই-বাচাই শেষে সদর থানার ওসির কাছে আটক রাখে।
বাদীর অভিযোগ, এই সময় তাকে ভয় দেখানো হয়েছিল যে বিষয়টি বাহিরে প্রকাশ করলে চাকরিতে ক্ষতি হতে পারে। এমনকি ভাড়াটিয়া গুন্ডা দিয়ে তাকে গুম করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার তারেকুজ্জামান তুহিন পারিবারিক শক্রতার কারণে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযোগটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছালে মনিরুজ্জামানকে ডাকা হয় এবং তার ব্যক্তিগত জিনিস জব্দ করা হয়।
এ ঘটনা আগে স্থানীয় ফেসবুক পোস্ট ও সামাজিক মাধ্যমেও আলোচিত হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছেন যে, মনিরুজ্জামানকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার প্রভাব স্থানীয় পুলিশ ব্যবস্থার উপরও পড়েছে। সাধারণ জনগণ ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাদীর আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
পিবিআই ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছে। তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা।
আইনগত প্রক্রিয়া
গাইবান্ধা সদর আমলী আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলার তদন্ত পিবিআই করবে এবং তদন্ত শেষ হওয়ার পর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। আদালত ইতোমধ্যে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় নির্ধারণ করেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলা পুলিশ প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
মতামত
কিছু কূটনৈতিক ও আইনগত বিশ্লেষক মনে করছেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের একটি নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার পরিবার থেকে মামলা দায়ের হওয়ার ঘটনা দেশের পুলিশ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের মতে, পিবিআইয়ের তদন্ত এবং আদালতের পর্যবেক্ষণ মামলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে এটি ভবিষ্যতে পুলিশ ও প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদের জন্য সতর্কতার বার্তা হিসেবে কাজ করবে।
শেষ কথা
গাইবান্ধায় এসআই মনিরুজ্জামানের স্ত্রী কর্তৃক দায়ের করা এই মামলা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। পিবিআইয়ের তদন্ত ও আদালতের সিদ্ধান্ত আশা করা হচ্ছে যাতে সত্য উদঘাটিত হয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিষয়টি দেশের পুলিশ প্রশাসন ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
এম আর এম – ১৯২৫,Signalbd.com