বিশ্ব

রাশিয়া-নেতৃত্বাধীন ছয় দেশের শক্তি প্রদর্শন, উদ্বিগ্ন পশ্চিমা বিশ্ব

Advertisement

বেলারুশে রাশিয়া-নেতৃত্বাধীন ছয় দেশের যৌথ সামরিক মহড়া শুরু হয়েছে, যা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্বেগ। কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (CSTO) বা সম্মিলিত নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা-র অধীনে এই মহড়া চলছে, যেখানে রাশিয়া, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের সেনাবাহিনী অংশ নিচ্ছে।

কোথায় ও কেন এই মহড়া?

৩১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই মহড়া বেলারুশের ভিটেবস্ক শহরলেপেল প্রশিক্ষণ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মহড়াটি ৭ দিনব্যাপী চলবে এবং এতে মূলত দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী (Rapid Response Force) এর সক্ষমতা বাড়ানো ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয় জোরদার করাই প্রধান লক্ষ্য।

বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো—
✔ আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
✔ পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা বাড়ানো
✔ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া

রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা TASS নিশ্চিত করেছে যে এই মহড়ায় রাশিয়ান সেনারা ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ভাগ করবে।

পারমাণবিক অস্ত্রের অনুশীলন: নতুন বার্তা?

বেলারুশের প্রধান জেনারেল স্টাফ পাভেল মুরাভেইকো জানিয়েছেন, এই মহড়ার অংশ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অনুশীলনও করা হবে। এটি শুধু সামরিক প্রস্তুতির অংশ নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি কড়া বার্তা। কারণ রাশিয়া এর আগে থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক হুমকি দিয়ে আসছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পারমাণবিক মহড়ার অন্তর্ভুক্তি ন্যাটো এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেবে।

সিএসটিও কী? এর ইতিহাস ও গুরুত্ব

কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (CSTO) গঠিত হয় ১৯৯২ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। সংস্থাটির লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখা, সন্ত্রাসবাদ দমন ও যৌথ সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। বর্তমানে সিএসটিও-তে ছয়টি দেশ সদস্য হিসেবে রয়েছে—

  • রাশিয়া
  • বেলারুশ
  • আর্মেনিয়া
  • কাজাখস্তান
  • কিরগিজস্তান
  • তাজিকিস্তান

যদিও নামমাত্র এটি ন্যাটোর মতো একটি জোট, তবে এর সামরিক ক্ষমতা অনেকাংশে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল।

কেন এই মহড়া পশ্চিমাদের জন্য উদ্বেগজনক?

বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে এক ধরনের ঠান্ডা যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি, তবে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে।

  • ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে।
  • রাশিয়া চীনসহ মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।
  • এবার বেলারুশে মহড়া, যা ইউক্রেন সীমান্তের কাছেই

এ কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করছে, এই মহড়া শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ নয়, বরং ভবিষ্যতের কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতামত

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন—
✔ “এই মহড়া মূলত পশ্চিমাদের উদ্দেশে একটি বার্তা, যে রাশিয়া এখনও শক্তিশালী।”
✔ “রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ মহড়া তাদের মনোবল বাড়াবে।”
✔ “এটি ন্যাটোর বিপরীতে শক্তি প্রদর্শনের একটি কৌশল।”

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মহড়া পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

  • ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়া আরও আগ্রাসী হতে পারে।
  • ন্যাটো দেশগুলো পাল্টা মহড়া চালাতে পারে।
  • বেলারুশ আরও বেশি করে রাশিয়ার কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে পরিণত হবে।

সিএসটিও বনাম ন্যাটো: কে কত শক্তিশালী?

ন্যাটো (NATO) বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামরিক জোট, যেখানে ৩২টি দেশ সদস্য। তাদের বাজেট ও প্রযুক্তি সিএসটিও’র তুলনায় বহুগুণ বেশি। তবে রাশিয়ার পারমাণবিক ক্ষমতা এবং বিশাল সেনাবাহিনী এখনও ন্যাটোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

সিএসটিও’র যৌথ বাহিনী যদিও সংখ্যায় ন্যাটোর চেয়ে কম, তবে তারা নিজেদের অঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

বেলারুশে শুরু হওয়া সিএসটিও’র যৌথ মহড়া শুধু একটি সামরিক অনুশীলন নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত বহন করছে। রাশিয়া ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করছে, অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব এটিকে হুমকি হিসেবে দেখছে। এখন দেখার বিষয়, এই মহড়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন কোন চিত্র ফুটে ওঠে।

MAH – 12602,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button