আঞ্চলিক

এবার রংপুরের পীরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের ৬ রোগী শনাক্ত

Advertisement

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গসহ ছয়জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, আর একজনের নমুনা ইতিমধ্যে গত রোববার নেওয়া হয়েছিল। রোগীরা মূলত দাঁড়িয়াপুর এলাকার বাসিন্দা। আক্রান্তদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন। তারা শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, “এই রোগীরা স্থানীয়ভাবে অসুস্থ গরির মাংসের সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টুটুল মিয়ার একটি গাভি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। গত ১১ অক্টোবর সেই গরিটি জবাই করা হয় এবং গ্রামবাসীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। মাংস কাটার সঙ্গে যুক্ত যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

শান্তি বেগম নামের একজন স্থানীয় নারী বলেন, “আমার ভাশুরের অসুস্থ গরিটি জবাই করার পর ৮-৯ জনের শরীরে ঘা দেখা দেয়। তবে তারা সবাই রংপুর মেডিকেল কলেজে যাননি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা শুরু করেছেন।”

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পীরগঞ্জে নতুন পাঁচজন রোগীর তথ্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত হয়নি। জেলা সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, “জেলায় মোট ১১ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। শরীরে ঘা শুকিয়ে গেলে নমুনা নেওয়া সম্ভব হয় না।”

এছাড়া অন্যান্য উপজেলার তথ্য অনুযায়ী, পীরগাছা ৩৮, কাউনিয়া ১৮, মিঠাপুকুর ১২, গঙ্গাচড়া ৭ জন সন্দেহজনক রোগী পেয়েছে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

গত জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারা যান। ৪ অক্টোবর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে রোমেক হাসপাতালে রোজিনা বেগম (৪৫) অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ রোধে রোগী শনাক্তকরণ, নমুনা সংগ্রহ এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রদান জরুরি।

প্রভাব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, “গ্রামে অসুস্থ গরির মাংসের কারণে এমন রোগ ছড়াতে পারে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।” স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং আক্রান্ত এলাকায় হাটবাজারে পশুর মাংস বিক্রি ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স হলো প্রাণীর সংক্রমণজনিত ব্যাকটেরিয়া যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ত্বকে ঘা, ফোঁড়া এবং তীব্র রোগের সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, “প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ঘা শুকিয়ে যায়, তবে নমুনা নেওয়া সম্ভব হয় না, ফলে রোগ শনাক্তকরণে বিলম্ব হতে পারে।”

তাদের মতে, রোগ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন, পশু স্বাস্থ্য বিভাগ ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ভবিষ্যতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করেছে। পশু জবাই ও মাংস বন্টনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, আক্রান্ত পশুর মাংস না খাওয়া এবং আক্রান্ত এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসন সচেতন হলে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তদুপরি, আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলে বিস্তৃত সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।”

এম আর এম – ১৮৯০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button