আঞ্চলিক

দাওয়াত খেতে যাচ্ছিলেন চাচা, কুপিয়ে মারলেন ভাতিজারা

Advertisement

রাজশাহীর চারঘাটের মোল্লাপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মোস্তফা শেখ (৪৭) নামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে দাওয়াত খেতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর ভাতিজারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপ দেয়। স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীরা হলেন মোস্তফার ভাতিজা শফিক শেখ, রফিক শেখ, ফরহাদ শেখ ও কদু শেখ। তাদের বাবার নাম রহমতউল্লাহ শেখ। মোস্তফা শেখের এবং রহমতউল্লাহ শেখের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিবাদ চলছিল।

ঘটনার বিস্তারিত

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দাওয়াত খেতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মোস্তফা শেখ বাড়ির পাশে রাস্তার ওপর আসেন। সেই সময় চারজন ভাতিজাসহ কয়েকজন তাঁকে ঘিরে ধরেন। জমিসংক্রান্ত তর্কের একপর্যায়ে তাঁরা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে মোস্তফাকে কোপানো শুরু করেন।

স্থানীয়রা আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত মোস্তফার অন্যান্য আত্মীয় লিটন শেখ, জাদু শেখ ও এনামুল শেখকেও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”

জমি বিবাদের ইতিহাস

মোস্তফা শেখ ও রহমতউল্লাহ শেখের মধ্যে জমি ভাগ-বন্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। মোস্তফার বাবা সমেতউল্লাহ শেখের দুই স্ত্রী ছিলেন। এক পক্ষের সন্তান রহমতউল্লাহ শেখ এবং অপর পক্ষের সন্তানরা হলেন মোস্তফা, মুনজিল, ফজেল ও এন্দা শেখ।

সমেতউল্লাহ শেখ মারা যাওয়ার পরও জমি সঠিকভাবে ভাগ-বন্টন হয়নি। দেড় বিঘার একটি পুকুরে চার ভাই মাছ চাষ করলেও রহমতউল্লাহ শেখকে ভাগ দেওয়া হয়নি। কয়েকদিন ধরেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

মোস্তফার ভাই মুনজিল বালাদিয়াড় বাজারের দিকে গেলে রহমতউল্লাহর ছেলে তার সঙ্গে তর্কাতর্কি ও সংঘর্ষে জড়িত হন। এর পর থেকে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

প্রতিক্রিয়া এবং স্থানীয়দের বক্তব্য

স্থানীয়রা এই ঘটনা শোনার পর চরমভাবে উদ্বিগ্ন। বিনা বেগম নামের এক নারী বলেন, “ওই পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে ঝামেলা মাঝেমধ্যেই হতো। পুলিশও মাঝে মাঝে আসত। কিন্তু এমন হিংসাত্মক ঘটনা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এমন ঘটনায় গ্রামে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্ত করতে হবে এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বিরোধ মীমাংসার উপায় খুঁজে বের করা জরুরি।

আইনগত ব্যবস্থা ও পুলিশি পদক্ষেপ

ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, “মোস্তফা শেখ হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। অভিযুক্তরা বর্তমানে পলাতক। তাদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে।”

পুলিশি সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত এই ধরনের বিরোধ প্রায়শই উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বিশ্লেষক মতামত

স্থানীয় প্রশাসন ও আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ থেকে হিংসাত্মক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। স্থানীয় সুশীল সমাজের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এই ধরনের সংঘাত কমানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “পরিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ সাধারণ, তবে সেই বিবাদকে হিংসায় রূপ দেওয়াটা সমাজের জন্য বিপজ্জনক। স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই এই ধরনের বিরোধ মীমাংসায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।”

ভবিষ্যতে কি পদক্ষেপ হতে পারে?

এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজকর্মীরা মনে করছেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য স্থানীয় আদালত ও সালিশ কমিটির ভূমিকা আরও শক্তিশালী করতে হবে। পরিবারগুলোর মধ্যে সচেতনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া, এই ধরনের হিংসা পুনরায় ঘটার সম্ভাবনা উন্মুক্ত থাকবে।

তবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় ভবিষ্যতে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড কমানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

এম আর এম – ১৮৮৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button