আঞ্চলিক

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

Advertisement

কামারখন্দে এক ১৪ বছরের কিশোরী মাদ্রাসাছাত্রীকে জোরপূর্বক রেস্তোরাঁয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় বাইরে কিশোরীর চিৎকার শোনা না যায়, সে জন্য উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে এক কিশোরী মাদ্রাসাছাত্রীকে জোরপূর্বক একটি রেস্তোরাঁয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে কিশোরীর চিৎকার বাইরে না পৌঁছানোর জন্য উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়েছিল। স্থানীয় পুলিশ অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ১৪ বছরের কিশোরী এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তাকে রাস্তা থেকে তুলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে যাওয়া হয়। ধর্ষণের সময় কিশোরীর চিৎকার চাপা দিতে সাউন্ডবক্সে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়।

এই ঘটনায় আজ সোমবার সন্ধ্যায় নাইম হোসেন (২০) নামের এক যুবকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওই কিশোরীর পরিবার।

ভুক্তভোগী কিশোরী উপজেলার একটি দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওই কিশোরী মাদ্রাসায় যেতে রোববার সকালে বাসা থেকে বের হয়। এ সময় তাকে জোর করে অটোরিকশায় তুলে ‘ডেরা ফাস্টফুড অ্যান্ড চায়নিজ রেস্টুরেন্টে’ নিয়ে ধর্ষণ করে নাইম। ইমরান (২১), আকাশ (২১), আতিক (২৩), নাছিম উদ্দিন (২০) এবং নাজমুল হক নয়ন (২০) নামে পাঁচ বন্ধু তাকে সহযোগিতা করেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের সময় যাতে তার চিৎকার কেউ শুনতে না পায়, সে জন্য জোরে সাউন্ডবক্সে গান বাজানো হয়। এ সময় রেস্তোরাঁর ফটকে পাহারায় ছিলেন ইমরান, আকাশ, আতিক, নাছিম ও নাজমুল।

এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক পার্থ সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।

মামলার বাদী কিশোরীর মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেয়ে প্রতিদিনের মতো রোববারও মাদ্রাসায় যায়। ছুটি হওয়ার পরও যখন বাড়ি আসে না তখন খোঁজাখুঁজি শুরু করি। হঠাৎ করে অচেনা এক লোক মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায়, আপনার মেয়ে অসুস্থ, সিরাজগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিকে আছে। পরে সেখানে গিয়ে দেখি, মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ। পরে তাকে এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।’

সোমবার ‘ডেরা ফাস্টফুড অ্যান্ড চায়নিজ রেস্টুরেন্ট’-এ গিয়ে দেখা যায়, কয়েক যুবক রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিচ্ছেন। সাংবাদিক দেখে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে চড়াও হন। পরে পুলিশ গিয়ে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করে এবং আলামত সংগ্রহের জন্য রেস্তোরাঁটি সাময়িক বন্ধ করে দেয়।

অভিযোগ ও মামলা

ভুক্তভোগীর মা সোমবার বিকেলে কামারখন্দ থানায় বাদী হয়ে নাইম হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। স্থানীয় পুলিশ জানায়, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কিশোরীকে প্রথমে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক পার্থ সাহা জানিয়েছেন, কিশোরীর চিকিৎসা চলছে এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল।

স্থানীয়রা জানান, এমন ঘটনা এলাকায় প্রথমবারের মতো ঘটেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের খোঁজ নিচ্ছে।

পুলিশের পদক্ষেপ

কামারখন্দ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আকতার জানান, রেস্তোরাঁয় থেকে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, মামলায় ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

পূর্বপ্রসঙ্গ ও সচেতনতা

শিশু ও কিশোরীদের নিরাপত্তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে স্কুল বা মাদ্রাসার পথে শিশুদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবারদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্কুল বা মাদ্রাসার পথে কিশোরী-কিশোরদের পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য পরিবেশে রাখা, পাশাপাশি স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।

ঘটনার গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতা মাথায় রেখে পুলিশ, পরিবার এবং স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয়ভাবে তদন্ত করছে। ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ঘটনার দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এখন গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

এম আর এম – ১৮৮৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button