
সাতক্ষীরার পলাশপোল এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে তাসলিমা আক্তার হিরা (১৯) নামের এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হিরা যশোর জেলার বাগআঁচড়া গ্রামের শাজাহান আলীর মেয়ে। তিনি সাতক্ষীরা শহরের অ্যাডলিব শোরুমে কর্মরত ছিলেন এবং প্রায় এক মাস আগে পলাশপোল এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া ওঠেন।
স্থানীয় পুলিশ ও পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, হিরার মৃত্যুর সঠিক কারণ তদন্তের পর জানা যাবে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
বিকেল ৪টার দিকে বাসার মালিক মাসুম বিল্লাহ শুভ পুলিশকে খবর দেন। তিনি জানান, হিরা তার বাসায় এক মাস ধরে ভাড়া থাকছিলেন। তাসলিমা সকালে যশোর যাওয়ার কথা বলে বাসা ছাড়েননি, তাই তিনি সন্দেহবশত পুলিশকে ফোন করেন।
পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দরজা ভেঙে বাসার ভেতর প্রবেশ করে এবং হিরার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মরদেহ থানায় নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।
অ্যাডলিব শোরুমের ম্যানেজার আতিয়ার রহমান বলেন, হিরা আমাদের স্টাফ ছিলেন। তার এই আকস্মিক মৃত্যু শোরুমের সকল কর্মীকে শোকাহত করেছে। হিরার অফ ডে হওয়ায় সকালে তিনি শোরুমে উপস্থিত ছিলেন না, তাই আমরা তৎক্ষণাৎ খোঁজ নিতে পারিনি।
পরিবার ও প্রতিবেশীর প্রতিক্রিয়া
হিরার ভাবি মোবাইল ফোনে জানান, চাকরির কারণে হিরা সাতক্ষীরায় ভাড়া থাকতো। তার বাবা-মা যশোরে আছেন। খবর পেয়ে তারা দ্রুত সাতক্ষীরায় রওনা হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আছিয়া খাতুন বলেন, শুনেছি মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা পুলিশকে সাহায্য করেছি মরদেহ নামাতে। প্রতিবেশীরা শোকাহত এবং ঘটনার সত্যতা জানার জন্য অপেক্ষায় আছেন।
তাসলিমা আক্তার হিরা সাতক্ষীরায় চাকরি করলেও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল যশোর থেকে। পূর্বে তিনি নাভারণে বসবাস করতেন। সম্প্রতি কাজের জন্য শহরে ভাড়া বাসায় উঠেছেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, ঘটনার সময় তিনি একা ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, হিরার মানসিক অবস্থার কিছুটা তথ্য পাওয়া গেছে এবং তদন্তে তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।
পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।”
ওসি আরও বলেন, “ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে আমাদের তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো অপরাধমূলক দিক ধরা পড়েনি।”
সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে প্রভাব
এই ধরনের ঘটনায় স্থানীয় সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হিরা অ্যাডলিব শোরুমে কর্মরত ছিলেন এবং সহকর্মীরা তার আকস্মিক মৃত্যুর কারণে শোকাহত। শোরুমের কর্তৃপক্ষ এবং সহকর্মীরা পরবর্তী সময়ে মানসিক সহায়তা প্রদানে উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশও সতর্ক হয়ে উঠেছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। যুব সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন সমাজকর্মীরা।
বিশেষজ্ঞ মতামত
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তরুণদের মানসিক চাপ ও কর্মক্ষেত্রের চাপ কখনও কখনও হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবার, সহকর্মী এবং সমাজের সক্রিয় সহযোগিতা না থাকলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
তাদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা তরুণদের জন্য অপরিহার্য।
তাসলিমা আক্তার হিরার আকস্মিক মৃত্যু স্থানীয় সমাজ, পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে শোকের ছায়া ফেলেছে। পুলিশ ও প্রশাসন ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তদন্ত চালাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সমাজ ও প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।
এম আর এম – ১৮৮৪,Signalbd.com