
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসা এক পর্যটককে জিম্মি করে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় জড়িত পাঁচজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে কক্সবাজার পুলিশ। রোববার রাত শহরের কলাতলী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আশপাশের এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আহত পর্যটক বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সোমবার দুপুর সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহমেদ পেয়ার গ্রেপ্তারকৃত ছিনতাইকারীদের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা ও অভিযানের বিস্তারিত
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে কলাতলী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এলাকায় কয়েকজন ছিনতাইকারী অটোরিকশাযোগে সৈকত থেকে হোটেলের দিকে যাচ্ছিলেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা পর্যটক সাইফুল্লাহকে জিম্মি করে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। প্রতিরোধ করলে ছিনতাইকারীরা সাইফুল্লাহকে ছুরিকাঘাত করে এবং মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আহত পর্যটককে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে রাত ১২টার মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল এবং ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীদের পরিচয়
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন:
- কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ডিককুল গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে মো. বাবুল (২৮)
- কক্সবাজার পৌরসভার পিটি স্কুল এলাকার মো. সেলিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২১)
- নতুন বাহারছড়া এলাকার ফজল করিমের ছেলে মো. সোহেল (২২)
- কলাতলীর কালা পুতুর ছেলে মো. সিদ্দিক (৪০)
- চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মো. সারোয়ারের ছেলে ইমরান সারোয়ার (২৫)
পুলিশ জানিয়েছে, তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে এবং জিজ্ঞাসাবাদে আরও অন্যান্য সহযোগী চিহ্নিতের চেষ্টা চলছে।
আহত পর্যটকের অবস্থা
ছুরিকাঘাতের শিকার পর্যটক সাইফুল্লাহ টাঙ্গাইলের বাসাইলের নাহালি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা সিদ্দিক সিকদার। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা স্থিতিশীল, তবে পর্যবেক্ষণ চলছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের তৎপরতা থাকায় সাইফুল্লাহর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। পর্যটক সুরক্ষা বিষয়ে প্রশাসনের সচেতনতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারে পর্যটন নিরাপত্তা: পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট
কক্সবাজার দীর্ঘদিন ধরে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু ভ্রমণ মৌসুমে ছিনতাই, চুরি এবং কখনও কখনও সন্ত্রাসী ঘটনার খবরও এসেছে। অতীতে সৈকতে পর্যটক এবং স্থানীয়দের উপর বিভিন্ন ছিনতাই ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন পর্যটন নিরাপত্তা জোরদার করতে বিশেষ নজর রাখছে। এখনো পর্যটন এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করেছে এবং আংশিক এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে। তবে পুলিশের দ্রুত অভিযান এবং ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার স্থানীয় পর্যটকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে দিয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, “পুলিশের তৎপরতায় আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে পর্যটকরা সচেতন থাকবেন এবং নিরাপত্তা মান বজায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে।”
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত অপরাধী গ্রেপ্তার করা কক্সবাজারের পর্যটন খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বলেছেন, পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে ভবিষ্যতে পর্যটক সংখ্যা কমার আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশও জানিয়েছে, এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে তারা পর্যটন এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাবে এবং আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কক্সবাজারে পর্যটককে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং পাঁচজন ছিনতাইকারীর গ্রেপ্তার পর্যটক নিরাপত্তার দিক থেকে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে ভবিষ্যতে আরও সচেতনতা এবং পর্যটন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির প্রয়োজন।
এই ধরনের ঘটনা পর্যটকরা সতর্ক থাকবেন এবং নিরাপত্তা নীতি মেনে চলবেন।
এম আর এম – ১৮৬৪,Signalbd.com