আঞ্চলিক

বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলারসহ ১৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে নৌবাহিনী

Advertisement

বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের অভিযোগে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে ১৪ ভারতীয় জেলে ও একটি ফিশিং ট্রলার আটক করেছে নৌবাহিনী। পরে তাদের মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়।

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ ধরার অভিযোগে ১৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। শুক্রবার দিবাগত রাতে ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে এফবি শুভযাত্রা নামের একটি ভারতীয় ফিশিং ট্রলারসহ তাদের আটক করা হয়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আটককৃত ট্রলার ও জেলেদের মোংলার দিগরাজ নৌঘাঁটিতে আনা হয়। পরে রাতে তাদের মোংলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নৌবাহিনীর অভিযানে ভারতীয় ট্রলার আটক

নৌবাহিনীর টহলরত জাহাজ ‘বানৌজা শহীদ আক্তার উদ্দিন’ শুক্রবার রাতে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় মাছ ধরতে থাকা একটি ভারতীয় ট্রলার শনাক্ত করে। জাহাজটি দ্রুত অভিযান চালিয়ে “এফবি শুভযাত্রা” নামের ট্রলারটিকে আটক করে। ট্রলারটিতে থাকা ১৪ ভারতীয় জেলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে, তারা ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ এলাকা থেকে মাছ ধরতে এসে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করেছেন।

মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, আটককৃত ট্রলারে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১০ মণ মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ মোংলার ফেরিঘাটে উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করা হয়, যার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

আটক জেলেদের পরিচয়

আটক জেলেদের নাম হলো— চন্দ্র দাস, আনন্দ দাস, সদানন্দ দাস, শেখর দাস, সুভাষ দাস, মনি শংকর শিকদার, বিপুল দাস, গৌরঙ্গ দাস, মৃত্যুঞ্জয় দাস, গৌরাঙ্গ হালদার, গৌতম দাস, বিশ্বজিৎ দাস, সুজন বিশ্বাস ও বিজয় দাস। তারা সবাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাসিন্দা।

মামলার প্রস্তুতি ও আইনানুগ ব্যবস্থা

মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, “আটক ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন ও বাংলাদেশি মৎস্যসম্পদ লুটের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।”

তিনি আরও জানান, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে। পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও স্থানীয় মৎস্য বিভাগের মধ্যে সমন্বিত অভিযান চালানো হবে।

বারবার বাংলাদেশ জলসীমায় ভারতীয় ট্রলারের অনুপ্রবেশ

গত কয়েক মাস ধরে বঙ্গোপসাগরে বারবার ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠছে। এর আগে চলতি বছরের ১৪ জুলাই দুটি ও ৩ আগস্ট একটি ভারতীয় ট্রলার একই ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে আটক করেছিল নৌবাহিনী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের এই অংশে ইলিশ ও অন্যান্য মাছের প্রাচুর্যের কারণে প্রতিবেশী দেশের কিছু জেলে প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে আসে। তবে এর ফলে বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ হুমকির মুখে পড়ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও প্রভাব পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হলেও অনেক জেলে আধুনিক ন্যাভিগেশন যন্ত্রের অভাবে সঠিক সীমা বুঝতে পারেন না। তবে এই যুক্তিতে অবৈধ প্রবেশের দায় এড়ানো যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান বলেন, “বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ রক্ষা করতে হলে সীমান্ত টহল বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় থাকা জরুরি, যাতে তাদের জেলেরা ভুলবশতও আমাদের জলসীমায় না আসে।”

অর্থনৈতিক প্রভাব ও আঞ্চলিক উত্তেজনা

বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের প্রবণতাও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

বাংলাদেশ সরকার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রতিবারই আটক জেলেদের আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় এবং ট্রলার জব্দ করে মাছ নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।

ভবিষ্যৎ করণীয় ও সরকারি উদ্যোগ

মৎস্য ও নৌবাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে নিয়মিত যৌথ টহল ও প্রযুক্তি-নির্ভর নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশি জেলেদেরকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে যাতে তারা ভারতীয় সীমায় না ঢোকে।

মোংলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে।

বঙ্গোপসাগরে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা নতুন নয়, তবে নৌবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে বাংলাদেশ জলসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের যৌথ উদ্যোগেই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। আপাতত আটক ১৪ ভারতীয় জেলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা হেফাজতে থাকবেন।

এম আর এম – ১৮৩৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button