আঞ্চলিক

লালনের আখড়াবাড়িতে মানুষের ভিড়ে মুঠোফোন চুরি, আটক ৬

Advertisement

 ফকির লালন শাহর ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় আয়োজিত তিন দিনের জাতীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করতে হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়। উৎসবের প্রথম দিনেই কয়েক শ মুঠোফোন চুরির ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনকে আটক করেছে কুমারখালী থানা পুলিশ।

বিস্তারিত

কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন, শুক্রবার রাতে উৎসবের ভিড়ে অন্তত ১৪ জন ভুক্তভোগী সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এছাড়া আরও অর্ধশতাধিক মানুষ মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ বর্তমানে তদন্ত করছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো ফোন উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

আটক ব্যক্তিরা হলেন:

  • সিরাজগঞ্জের শামিম তালুকদার (২৮)
  • নেত্রকোনার সেফায়েত উল্লাহ (১৯)
  • কুষ্টিয়ার সজিব (১৯)
  • মৌলভীবাজারের রমজান আলী (২৬)
  • ময়মনসিংহের রাজিব মিয়া (২০)
  • পাবনার আবদুল মালেক (২৫)

উৎসবস্থল ও আশপাশের এলাকায় পুলিশি নজরদারি থাকলেও জনসমাগমের সুযোগ নিয়ে চোর চক্র সক্রিয় ছিল।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা

উপজেলার সদকী ইউনিয়নের স্কুলশিক্ষক পলাশ কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, তিনি রাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে মুঠোফোন হারান এবং থানায় জিডি করেন। ফরিদপুরের মো. বিল্লাল বিশ্বাসও ভিড়ের মধ্যে চুরি হওয়া ফোনের অভিযোগ করেন। কুষ্টিয়ার এক সংগীতশিল্পী ও স্থানীয় সাংবাদিকও একই রাতে ফোন হারান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী তানবিন ইসলাম রাব্বি বলেন, তার স্মার্টফোন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে চুরি হয়, যা গুরুত্বপূর্ণ নথি ধারণ করছিল।

উৎসব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ফকির লালন শাহর ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে ছেঁউড়িয়ায় তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয় এবং রোববার মধ্যরাতে লালন সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এবার জাতীয়ভাবে আয়োজন থাকায় আখড়াবাড়িতে ভিড় এত বেশি ছিল যে পকেট থেকে মুঠোফোন চুরি হওয়া সহজ হয়ে যায়। একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান কোহিনুর ইসলাম বলেন, ভিড়ে কখন তার ফোনটি চুরি হয়েছে তা বুঝতে পারেননি।

পুলিশি পদক্ষেপ ও আইনানুগ ব্যবস্থা

কুমারখালী থানার পরিদর্শক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, “ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ে আইনি কার্যক্রম চলছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ভিড়পূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, যাতে চোর চক্রের কার্যক্রম দ্রুত ধরা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনা ও প্রভাব

গত বছরও এই উৎসবে কয়েকশ ফোন চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তবে এবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার পরও চুরি ঠেকানো যায়নি। ভুক্তভোগীরা জানান, জনসমাগম ও উৎসবের আনন্দের মাঝে সতর্কতার অভাব চোরদের সুযোগ দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৃহৎ জনসমাগমে ব্যক্তিগত মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদ রাখার জন্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ফকির লালন শাহর তিরোধান দিবসের উৎসবে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মুঠোফোন চুরির ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও জনসমাগমের সুযোগে চোর চক্র সক্রিয় থাকে। পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

ভবিষ্যতে জনসমাগমপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনা রোধে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা জরুরি।

এম আর এম – ১৮৩১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button