
চট্টগ্রামের সিইপিজেড (চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন) এলাকায় একটি তোয়ালে উৎপাদনকারী কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে কারখানার ৫, ৬ ও ৭ম তলায় আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।
অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি দলও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটির ওপরের তলা থেকে হঠাৎ ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। কিছু সময়ের মধ্যে তা ঘন কালো ধোঁয়ায় পুরো এলাকা ঢেকে ফেলে। কারখানার কর্মচারীরা আতঙ্কে বাইরে ছুটে আসেন।
ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযান
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানান, দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আগুনের খবর পেয়ে ২ মিনিটের মধ্যেই প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। এরপর ধাপে ধাপে সিইপিজেড, বন্দর, কেইপিজেড ও আগ্রাবাদ স্টেশন থেকে আরও ১৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে যোগ দেয়।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জানান, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগছে কারণ ভবনের ভেতরে তোয়ালে, তুলা ও কাপড়জাত দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। সেগুলো আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছে।”
নৌবাহিনীর সদস্যরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেন। তারা মূলত পানি সরবরাহ, ভেতরে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার ও নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে সহায়তা করেন।
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য
প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপদে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে বের করে আনা হয়েছে।
কারখানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের বেশিরভাগ কর্মী দুপুরের বিরতিতে ছিলেন, যার ফলে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো গেছে।
আগুনে ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিস আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করবে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক ত্রুটি
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ভবনের ৬ষ্ঠ তলার বৈদ্যুতিক সার্কিটে শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
তবে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর বিভাগের উপকমিশনার বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছি। প্রাথমিকভাবে শ্রমিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে আগুন লাগার কারণ উদঘাটন করা হবে।”
শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক, সড়কে যানজট
অগ্নিকাণ্ডের পর কারখানার আশেপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো শ্রমিক কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় সিইপিজেড লিংক রোডে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলে সমস্যা তৈরি হওয়ায় পুলিশ দ্রুত সড়ক খালি করে দেয়। স্থানীয় প্রশাসন ও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
এক শ্রমিক বলেন, “হঠাৎ ধোঁয়া দেখে সবাই দৌড় শুরু করে দেয়। আমরা শুধু জীবন বাঁচাতে বাইরে আসি। কিছু সহকর্মী ভেতরে ছিল, পরে ফায়ার সার্ভিস তাদের বের করে আনে।”
আগুন নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময়
বিকেল ৪টা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন যাতে পাশের ভবনে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আশপাশে পানির প্রাচীর তৈরি করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
পূর্বে এমন দুর্ঘটনা
চট্টগ্রাম শিল্পাঞ্চলে এর আগে ২০২২ ও ২০২৩ সালে দুটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যেখানে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব আগুনের কারণ হয় বৈদ্যুতিক ত্রুটি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি।
শিল্প নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও জরুরি নির্গমন পথের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত না করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।”
চট্টগ্রাম ইপিজেডের তোয়ালে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি আবারও শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা সামনে নিয়ে এসেছে। প্রাণহানি না হলেও ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসন ও কারখানা কর্তৃপক্ষের তদন্তে প্রকৃত কারণ বের হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এম আর এম – ১৮০৩,Signalbd.com