
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনার প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় নেয়ার কারণে আজ বুধবার ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হচ্ছে না। চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও আইটি সেলের প্রধান অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি তিন ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে এবং এটি স্বচ্ছ ও নির্ভুল করার জন্য সময় প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রি-স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার পাতা পরীক্ষা করেছি। কোনো বাইরের বা ভুল পৃষ্ঠা মেশিনে প্রবেশ করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। মোটামুটি সময়ের হিসাব অনুযায়ী, ভোট গণনা সম্পূর্ণ করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।”
ভোট গণনার প্রক্রিয়া
চাকসু নির্বাচনে প্রতিটি হলের ভোট তিন ধাপে গণনা করা হচ্ছে। প্রথমে ব্যালটগুলো মেশিনে স্ক্যান করা হয়, এরপর ব্যালটের সঠিকতা যাচাই করা হয় এবং শেষে রেজাল্ট তৈরি হয়। প্রতিটি ধাপের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে।
নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে, মেশিন সঠিকভাবে পৃষ্ঠা শনাক্ত করছে এবং ভোটের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র থেকে নির্বাচনের বাক্সগুলো কেন্দ্রীয় গণনা স্থলে পৌঁছে দিয়ে গণনার কাজ শুরু হয়েছে।
নির্বাচনের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
চাকসু নির্বাচন দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯০ সালে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। এতদিন ক্যাম্পাস প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠন এবং ক্ষমতাসীন দলের দখলে ছিল। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাবার ও পরিবহন সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করা হয়নি। ক্যাম্পাসে প্রায়ই সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে মোট ছয়বারই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ এবং ১৯৯০ সালের নির্বাচন উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশ, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য চাকসুর গুরুত্ব অপরিসীম।
ভোটার সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা
চাকসু নির্বাচনে এবার ভোটার প্রায় ২৭,৫১৬ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১,১৫৬ জন। নির্বাচনে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী লড়ছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। পাশাপাশি ১৪টি হল ও ১টি হোস্টেলে মোট ৪৯৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন এবং সহসাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হোস্টেল ও হলগুলোতে মোট ২১০টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রস্তুতি
নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে, ভোট কেন্দ্রগুলোতে প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণ করছেন এবং ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। নির্বাচন সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় এবং গণনা শুরু হয়। গণনার প্রতিটি ধাপ বড় পর্দায় প্রদর্শিত হচ্ছে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
প্রভাব ও বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নির্বাচনের ফলাফল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হলে এটি ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষার্থীরা এবার তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারছেন, যা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক প্রশাসনিক ও শিক্ষামূলক পরিবেশ গড়ে তুলবে।
চাকসুর নির্বাচন না হওয়ায় অতীত কয়েক দশকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে বাধ্য হয়েছিল। এবার ভোটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেরা নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারবে, যা ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চাকসু নির্বাচনের ফল আজ ঘোষণা হচ্ছে না। ভোট গণনার জটিল প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কারণে ফলাফল বৃহস্পতিবার প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বৃহস্পতিবার ফলাফল প্রকাশের পর ছাত্ররাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে, যা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ও সামাজিক পরিবেশকে প্রভাবিত করবে।
এম আর এম – ১৭৯৪,Signalbd.com