আঞ্চলিক

দুর্গন্ধের সূত্র ধরে পরিত্যক্ত ডোবায় মিলল নিখোঁজ কিশোরের মরদেহ

Advertisement

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমশুরা এলাকা থেকে নিখোঁজ কিশোর ফয়সাল ঢালীর (১৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ ও কিশোরের অটোরিকশা উদ্ধার করেছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনার বিবরণ

নিহত কিশোর ফয়সাল ঢালী বুধবার দুপুরে অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পরবর্তীতে তাকে আর কেউ খুঁজে পাননি। নিখোঁজ হওয়ার একইদিন বিকেলে স্থানীয়রা ফয়সালের অটোরিকশা ফুলতলা এলাকায় দেখতে পান। রাতে তার মা ফাতেমা বেগম সদর থানায় লিখিতভাবে নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে মৃতদেহ পরিত্যক্ত ডোবায় পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফয়সালের অটোরিকশায় থাকা ব্যাটারির জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে।

তদন্ত ও প্রাথমিক তথ্য

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, মরদেহ ও অটোরিকশা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ধরা হয়েছে, অটোরিকশায় থাকা চারটি ব্যাটারির মধ্যে একটি পাওয়া গেছে, বাকি তিনটির সন্ধান এখনও মেলেনি।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর নিহতের পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়দের বক্তব্য

নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলা হয়েছে। তারা সুষ্ঠু ও দ্রুত তদন্তের দাবি করেছেন। স্থানীয়রা আরও জানান, কিশোর ফয়সাল গ্রামের মধ্যে একজন শান্তিপ্রিয় ছেলে ছিলেন। তিনি প্রায়ই স্থানীয়দের সাহায্য করতেন এবং কখনো কোনো বিবাদে জড়াননি।

স্থানীয়দের মতে, দুর্গন্ধের সূত্র ধরেই মরদেহের সন্ধান মিলেছে। এতে বোঝা যায়, এলাকায় যথেষ্ট সময় ধরে মরদেহ রাখা হয়েছে।

পুলিশি ব্যবস্থা

পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করার সাথে সাথে ঘটনার স্থান পরিদর্শন করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হত্যার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পিত কিনা তা নির্ধারণের জন্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পাশাপাশি এলাকার আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

ওসি আরও জানান, অটোরিকশায় থাকা ব্যাটারির সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার পেছনে আর্থিক লোভ বা প্রতিশোধমূলক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পূর্বপটভূমি

মুন্সিগঞ্জ জেলায় পূর্বেও কিছু নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে শিশু বা কিশোরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ডোবায় ফেলে রাখার ঘটনা এই প্রথম ধরা পড়ল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা সামাজিক সচেতনতার ঘাটতি এবং নিরাপত্তার অভাবকে তুলে ধরে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

সামাজিক কাজকর্মী ও শিশু অধিকার সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন, নিখোঁজ কিশোরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পরিবার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সতর্ক হতে হবে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড শুধু পরিবারকে নয়, পুরো কমিউনিটিকেই আঘাত করে।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে দ্রুত বিচার প্রয়োজন। পাশাপাশি সমাজে শিশুদের নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতন কার্যক্রম জরুরি।

পরিশেষে

মুন্সিগঞ্জের চরকেওয়ার ইউনিয়নের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, স্থানীয় পর্যায়ে অপরাধ এবং শিশুদের নিরাপত্তা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং পরিবারের পাশাপাশি সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

নিখোঁজ কিশোর ফয়সাল ঢালীর হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো কমিউনিটিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করা এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ১০৮৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button