
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে ইলিশ ধরার অপরাধে ১৪ জন জেলেকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ১ লাখ মিটার জাল ও ২৯ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। এছাড়া জব্দ হওয়া দুইটি নৌকা নিলামে বিক্রি করে ৬১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে, শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বেলা ৩টা থেকে শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা ৩টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অধিদফতরের যৌথ অভিযানে এসব জেলে আটক হয়। অভিযানে মোট চারটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
অভিযান ও কার্যক্রমের বিস্তারিত
জেলা মৎস্য অধিদফতর জানায়, এই অভিযানে ১৪ জন জেলে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পেয়েছেন। তাদের অবৈধভাবে ধরা ইলিশ জাল এবং মাছ জব্দ করা হয়েছে। জব্দ হওয়া নৌকাগুলো নিলামে বিক্রি করা হয় এবং আয় সরকারী কোষাগারে জমা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব উল হক বলেন, “ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। জেলেদের সচেতন করার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে।”
নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর (৪ অক্টোবর) থেকে রাজবাড়ীতে মোট ৬১টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এই সময় ১৫টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ লাখ ৯২ হাজার মিটার জাল, ৮৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ এবং তিনটি নৌকা বিক্রি করে ৯৭ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
জেলেদের অবৈধ শিকার এবং আইন অমান্য করার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই নথিভুক্ত হচ্ছে। মৎস্য অধিদফতর ও প্রশাসন বলছে, প্রজনন মৌসুমে এ ধরনের অভিযান অপরিহার্য, যাতে ইলিশের প্রজনন সুরক্ষিত থাকে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই ধরনের অভিযান নদীর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, এমন অভিযান তাদের জন্য সতর্কতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সরকার ও মৎস্য অধিদফতরের এই কঠোর পদক্ষেপ ইলিশ সংরক্ষণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একজন স্থানীয় জেলে বলেন, “আইন মানা না হলে অনেকেই শিকার করতে পারে। এখন সরকারি অভিযান ও জরিমানা আমাদের সচেতন করছে।”
আইন প্রয়োগ ও সামাজিক দায়িত্ব
মৎস্য অধিদফতর বলছে, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। জেলেদের জানানো হচ্ছে, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মনীতি মানা আবশ্যক। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে, যাতে অবৈধ শিকার রোধ করা যায়।
মো. মাহবুব উল হক বলেন, “আমরা চাই যে জেলেরা শুধুমাত্র আইন মানুক না, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হোক। ইলিশের সঠিক প্রজনন নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।”
রাজবাড়ীতে অবৈধভাবে ইলিশ শিকার রোধে অভিযান এবং জেলেদের কারাদণ্ড প্রদানের ঘটনা ইঙ্গিত করছে, সরকার এবং মৎস্য অধিদফতর আইন প্রয়োগ ও সংরক্ষণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আগামী প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা এবং নদীর ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের লক্ষ্য সামনে রেখে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এম আর এম – ১৭২৩,Signalbd.com