প্রেমিকার বাড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে ছটফট করছিলেন যুবক, ভিডিও করছিলেন অন্যরা

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার সামান্যপাড়া গ্রামে এক যুবক প্রেমিকার বাড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। এই ঘটনাকে ঘিরে বাড়ির লোকজন এবং প্রতিবেশীরা অব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, কেউবা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছিলেন। একপর্যায়ে যুবক নিস্তেজ হয়ে গেলে তাকে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার বিস্তারিত
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে ঘটনার সময় নিহত যুবকের নাম স্বপন প্রামাণিক (৩৫)। তিনি পাবনা সদর উপজেলার খয়সুতি গ্রামের ইমাম প্রামাণিকের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বপন দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। কথিত প্রেমিকা স্বপনের সঙ্গে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
ঘটনার দিন সকালে স্বপন প্রেমিকার বাড়িতে যান এবং প্রথমে নিজের হাত কাটেন। এরপরও প্রেমিকা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তিনি গ্যাস ট্যাবলেট খান। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে স্বপন বাড়ির উঠানে ছটফট করতে থাকেন এবং বাঁচানোর আকুতি জানাতে থাকেন। আশপাশের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা এই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে থাকেন। পরে তাকে স্থানীয় ক্লিনিকে নেওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়া ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার ভিডিও বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্বপন মৃত্যুর আগ মুহূর্তে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন, কিন্তু আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। মানবিক দায়িত্বের ব্যর্থতায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে কেউ সাহায্য না করে ভিডিও ধারণ করছে, যা সমাজে নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিন্দার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রেমিকার এবং পরিবারের তথ্য
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কথিত প্রেমিকা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যান। তার মামাশ্বশুর জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও স্বপন তার আগেই মারা গিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্বপন ও ওই নারী দুজনই বিবাহিত। ঘটনার পর রাতে স্বপনের স্ত্রী বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা অঞ্চলে পারিবারিক সম্পর্ক ও পরকীয়ার কারণে সংঘটিত হতাহতের ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি সামান্যবিক বিভিন্ন সামাজিক এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন ঘটনাগুলি ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানসিক চাপ, সম্পর্কের জটিলতা এবং সামাজিক মাধ্যমের অসদুপযোগ এই ধরনের ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলছে।
সামাজিক সচেতনতা ও মানবিক দায়িত্ব
স্থানীয়দের মতে, কেউ সাহায্য না করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা মানবিক দায়িত্বের বড় ব্যর্থতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। যেকোনও মানসিক বা শারীরিক সংকটের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সহায়তা না পেলে এমন মর্মান্তিক পরিস্থিতি ঘটতে পারে।
পুলিশি ব্যবস্থা ও আইনগত প্রক্রিয়া
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্ত শেষে স্বপনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, পুলিশ সামাজিক ও মানসিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি, পরবর্তী ঘটনা এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, “পরকীয়া ও সম্পর্কের জটিলতার কারণে মানসিক চাপ বাড়লে ব্যক্তি সহজেই হতাশায় পতিত হতে পারে। সামাজিক সহযোগিতা এবং তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ প্রাণ বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ।” তারা আরও বলেছেন, সমাজে এমন মানসিক সঙ্কট মোকাবেলায় মানুষকে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে এবং ভিডিও ধারণের প্রবণতা কমাতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার এই ঘটনায় দেখা গেল, মানসিক ও সামাজিক সমস্যা সঠিকভাবে মোকাবেলা না করলে ব্যক্তিগত জীবন বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মাধ্যমে সমাজকে সতর্ক হতে হবে, মানবিক দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এম আর এম – ১৭০৬,Signalbd.com