আঞ্চলিক

নোয়াখালীতে শিয়ালের মাংস বিক্রি, আটক কর্মচারীকে ছিনিয়ে নিল দুর্বৃত্তরা

Advertisement

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বাজারে অবস্থিত ‘দুলাল মাংস বিতান’ নামের দোকানে শিয়ালের মাংস বিক্রির খবর পেয়ে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তারা অভিযান চালান। অভিযানে দোকানের এক কর্মচারীকে আটক করা হলেও, পুলিশ উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে একদল দুর্বৃত্ত তাকে ছিনিয়ে নেন।

ঘটনার বিস্তারিত

৩ অক্টোবর রাতে উপকূলীয় বন বিভাগের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে প্রায় ১০–১৫ কেজি শিয়ালের মাংস উদ্ধার করা হয়। দোকানের কর্মচারী ঘটনাস্থলেই আটক হন। তবে দোকান মালিক দুলাল পালিয়ে যান।

অভিযানকারীরা জানান, আটককৃত কর্মচারী ঘটনাস্থলেই শিয়ালের মাংস বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে, একদল দুর্বৃত্ত উপস্থিত হয়ে তাকে ছিনিয়ে নেন। একই সময়ে দুর্বৃত্তরা বন বিভাগের একটি গাড়িতে হামলার চেষ্টা করেন।

‘দুলাল মাংস বিতান’ দোকানটি দীর্ঘদিন ধরে শিয়ালের মাংস বিক্রি করে আসছিল। শিয়ালের মাংস প্রতি কেজি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হতো।

নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে বন্য প্রাণী নিধন নিয়মিত হলেও শিয়ালের মাংস বিক্রি থামছে না। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১২টি অভিযানে প্রায় ৬০ কেজি শিয়ালের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে।

শিয়াল তফসিল-২-ভুক্ত প্রাণী। অর্থাৎ শিয়াল রক্ষিত বন্যপ্রাণী হিসেবে স্বীকৃত। এর অবৈধ শিকার ও মাংস বিক্রি করা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয়।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিল বলেন, “এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা চালানো হবে।”

নোয়াখালীভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অ্যানিমেল রাইট বিডি-৬৪’ জানান, শিয়ালের মাংস ও তেলের জন্য লোকেরা গোপনে শিকার চালায়। অনেকেই বিশ্বাস করেন, শিয়ালের মাংস বাতব্যথা ও হাঁটুর ব্যথা দূর করতে কার্যকর। তবে চিকিৎসকরা এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে অস্বীকৃত মনে করেন।

শিয়ালের সংখ্যা ও পরিবেশগত গুরুত্ব

শিয়াল এখন ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি হিসেবে আইইউসিএন তালিকাভুক্ত। বন ও ঝোপঝাড় উজাড়, বাড়ি নির্মাণ এবং অবৈধ শিকার শিয়ালের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে।

প্রাণিবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিয়াল ইঁদুর ও ক্ষুদ্র প্রাণী শিকার করে ফসলের ক্ষতি কমায়। এছাড়া ফলমূল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দেওয়ায় পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কিত বিশ্বাস

গ্রামীণ এলাকায় শিয়ালের মাংস বা তেল ব্যবহারের মাধ্যমে বাতব্যথা ও হাঁটুর সমস্যা কমে—এমন প্রচলিত ধারণা আছে। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শিয়ালের মাংস বা তেল ব্যবহারে গেঁটে বাত বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কোনো বৈজ্ঞানিক সুফল নেই। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়াই নিরাপদ।

আইন ও দণ্ডনীয় ব্যবস্থা

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া বন্যপ্রাণী বা তার অংশ সংরক্ষণ বা বিক্রি করলে এক বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

অবৈধ শিকার ও মাংস বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বন বিভাগ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে নোয়াখালী ও চৌমুহনী এলাকায় অভিযানে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও জরিমানা করা হয়েছে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিয়ালের মাংস বিক্রি ও পুলিশি আটককৃত কর্মচারীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় সতর্কবার্তা। বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এই ধরনের অপরাধ রোধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোর নজরদারি ও জনগণ সচেতন করার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।

এম আর এম – ১৬৮৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button