আঞ্চলিক

ইঞ্জিন বিকলে সাগরে ভাসছিল ট্রলার, ২৬ জেলে উদ্ধার

Advertisement

 বঙ্গোপসাগরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে মাঝসমুদ্রে আটকা পড়া ‘এমভি তাজমিনুর রহমান’ ট্রলার থেকে ২৬ জন জেলেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী

বঙ্গোপসাগরে ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় ২৬ জন জেলে নিয়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার মাঝসমুদ্রে ভেসে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার নৌবাহিনীর টহল কার্যক্রমের সময় এই বিপদ সংকেত লক্ষ্য করে ‘বানৌজা শহীদ মহিবুল্লাহ’ জাহাজ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অসহায় জেলেদের নিরাপদে উদ্ধার করে।

উদ্ধার অভিযান ও পরিস্থিতি

নৌবাহিনী জানিয়েছে, কক্সবাজার বাতিঘরের প্রায় ২৭ নটিক্যাল মাইল দূরে ভাসমান ট্রলারটিকে শনাক্ত করা হয়। ট্রলারটির গতিবিধি অস্বাভাবিক হওয়ায় নৌবাহিনী তৎপর হয়ে দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

অভিযানকারীরা ট্রলারটির কাছে পৌঁছানোর পর বিপদগ্রস্ত জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। জেলেদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল এবং তারা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য ব্যাকুল ছিল। নৌবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত তাদের প্রয়োজনীয় খাবার, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। এরপর সবাইকে নিরাপদে তীরে নিয়ে আসা হয়।

জেলেদের পরিচয় ও ট্রলারের তথ্য

উদ্ধারকৃত জেলেরা কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা। ‘এমভি তাজমিনুর রহমান’ নামের ট্রলারটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে গিয়েছিল। ৩ অক্টোবর ফেরার কথা থাকলেও ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় ট্রলারটি মাঝসমুদ্রে আটকা পড়ে।

নৌবাহিনী বলেছে, ট্রলারটি ও জেলেদের নিরাপদে তীরে আনার পর তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই অভিযান স্থানীয় জনগণ এবং জেলেদের পরিবারগুলোর জন্য বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে।

নৌবাহিনীর টহল কার্যক্রম ও সতর্কতা

‘মা ইলিশ সংরক্ষণ-২০২৫’ অভিযানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় নিয়মিত টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ অভিযান শুধুমাত্র মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

নৌবাহিনী আরও জানিয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিয়মিত নজরদারির আওতায় রাখা হচ্ছে। এই ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতে মাছ ধরা সংক্রান্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সমুদ্র বিপদ

বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরার ট্রলারে ইঞ্জিন বিকল, শক্তি সংকট, বা খারাপ আবহাওয়ার কারণে জেলেদের বিপদ ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলেদের জন্য নিরাপদ ট্রলার পরিচালনা এবং টহল কার্যক্রম জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে সমুদ্রের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব এবং জীবন রক্ষা করা যায়।

উদ্ধার অভিযান পরবর্তী সহায়তা

উদ্ধারের পর নৌবাহিনী জেলেদের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটানোর জন্য খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি প্রদান করে। প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে জেলেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরে ট্রলারটিকে এবং জেলেদের নিরাপদে তীরে আনা হয়।

এই ধরনের সহায়তা জেলেদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নৌবাহিনীর দক্ষতা ও তৎপরতার বার্তা পৌঁছে দেয়।

সমুদ্র নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ উদ্যোগ

নৌবাহিনী বলেছে, দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা এবং উপকূলীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মাছ ধরার ট্রলারে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বসানো, নিয়মিত টহল, এবং জেলেদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তি ও সঠিক তৎপরতার মাধ্যমে সমুদ্র বিপদ হ্রাস করা সম্ভব। এছাড়া স্থানীয় জেলেদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করাও গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণ জনমতের প্রভাব

স্থানীয়রা এই উদ্ধার অভিযানকে প্রশংসা করেছেন। জেলেদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের মানুষ নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাদের তৎপরতার জন্য। এমন ধরনের তৎপরতা ভবিষ্যতে উপকূলীয় জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করবে।

নৌবাহিনী বলেছে, “উদ্যোগগুলো শুধু এক দিনের কাজ নয়, বরং নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।” এটি সমুদ্র জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য অপরিহার্য।

বঙ্গোপসাগরে মাঝসমুদ্রে ট্রলার ভেসে থাকার ঘটনা সাগরের বিপদের প্রতি সচেতন হওয়ার একটি বার্তা। নৌবাহিনীর তৎপরতা ও সঠিক সময়ে উদ্ধার অভিযান ২৬ জন জেলের জীবন রক্ষা করেছে। ভবিষ্যতে আরও আধুনিক টহল এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমুদ্রের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে।

এম আর এম – ১৬৮১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button