
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শহীদ শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মৃতিতে পলাশী গোলচত্বরে আগ্রাসনবিরোধী ‘আট স্তম্ভ’ উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এই স্মারক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, আবরার ফাহাদের পরিবার এবং অন্যান্য বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভের ধারণা ও উদ্দেশ্য
আটটি স্তম্ভের প্রতিটি স্তম্ভ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ন্যায়পরায়ণ চেতনার প্রতীক। এই আটটি স্তম্ভের বিষয় হলো:
১. সার্বভৌমত্ব
২. গণতন্ত্র
৩. গণপ্রতিরক্ষা
৪. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
৫. অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা
৬. দেশীয় শিল্প, কৃষি, নদী, বন ও বন্দর রক্ষা
৭. সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা
৮. মানবিক মর্যাদা
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “আট স্তম্ভের অবয়বের চেয়ে তাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত মূল্যবোধগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই শব্দগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই বদ্বীপের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে।”
নির্মাণ প্রক্রিয়া ও ব্যয়
ডিএসসিসি জানিয়েছে, শহীদ আবরারের স্মৃতি ও আগ্রাসনবিরোধী চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি স্মরণে পলাশী গোলচত্বরে আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ নির্মাণ ও পলাশী ইন্টারসেকশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
ফ্যাসিবাদের সময় হাজার-হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য ও প্রকল্প নির্মিত হলেও বর্তমান সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নিলে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়। তুলনামূলকভাবে এই আট স্তম্ভ নির্মাণে মাত্র ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
আবরার ফাহাদের স্মৃতি ও সামাজিক প্রভাব
আবরার ফাহাদ কেবল একজন ব্যক্তি ছিলেন না, বরং তিনি একটি চেতনা ও আদর্শের প্রতীক। ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়া আবরার ফাহাদের এই স্মৃতিস্তম্ভ তার জীবন ও আদর্শকে আরও প্রজ্বলিত করবে।
ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “আবরার ফাহাদ যে বীজ বপন করেছিলেন, সেটি এখন একটি মহীরুহ হয়ে উঠেছে। তার চেতনা ও আদর্শ সমগ্র সমাজকে আগ্রাসনবিরোধী চেতনার পথে পরিচালিত করবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্য
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম অনুষ্ঠানে বলেন, “আট স্তম্ভের অবয়বের চেয়ে তাদের মধ্যে লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। এই মূল্যবোধ বাস্তবায়নই প্রকৃত স্বাধীনতার মাপকাঠি।”
ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী, আখতার হোসেন, আবরার ফাহাদের পিতা মো. বরকত উল্লাহ এবং ভাই আবরার ফাইয়াজও বক্তব্য রাখেন। তারা সকলেই আবরারের স্মৃতিকে তরুণ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সামাজিক ও শিক্ষামূলক গুরুত্ব
‘আট স্তম্ভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে। এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং দেশের যুবসমাজকে ফ্যাসিবাদবিরোধী, ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক চেতনার দিকে উদ্বুদ্ধ করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং সামাজিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করবে।
শহীদ আবরার ফাহাদের স্মৃতিতে নির্মিত আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ বাংলাদেশের যুবসমাজকে ন্যায়, মানবিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার আদর্শের দিকে উদ্বুদ্ধ করবে। এই স্তম্ভ শুধু ইতিহাস স্মরণ করবে না, বরং নতুন প্রজন্মের কাছে একটি শিক্ষণীয় প্রতীক হিসেবেও কাজ করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, আবরারের এই চেতনা ও উদ্যোগ দেশের শিক্ষামূলক ও সামাজিক পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
এম আর এম – ১৬৭২,Signalbd.com