
মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টিতে নিজের দোকানে স্বর্ণ লুটের নাটক সাজিয়ে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছেন স্বর্ণ কারিগর শুভ দাশ (৩৫)। পুলিশ জানায়, তিনি নিজেই ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে কয়েকজন দুর্বৃত্তকে ভাড়া করে এই পরিকল্পনা করেছিলেন। ঘটনার মূল হোতা হিসেবে তাকে এবং আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিস্তারিত
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতে শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকার স্বর্ণকারপট্টিতে অবস্থিত ‘অভি অলংকার’ নামের দোকানে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শুভ দাশ মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে তিন জন দুর্বৃত্তকে দোকানে প্রবেশ করতে বলেন। এরপরই তারা দোকানে ঢুকে ভয়ংকর ছিনতাইকারীর মতো আচরণ করে।
ঘটনাকে বাস্তবসম্মত করতে শুভ দাশকেও আহত করা হয়। পুলিশ জানায়, দুর্বৃত্তরা লকার খুলে ২২ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। ঘটনার পরে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তদন্ত শুরু করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা এবং উদ্ধারকৃত স্বর্ণ
রোববার গভীর রাতে মানিকগঞ্জ পৌরসভার পৌলী গ্রামের শাইলীপাড়া থেকে পুলিশ তিন জন দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, স্বর্ণ লুটের মূল পরিকল্পনাকারী দোকান মালিক নিজেই।
গ্রেপ্তাররা হলেন:
- শুভ দাশ, অভি অলংকারের মালিক
- আমানত হোসেন
- সোহান মিয়া
- শরীফ খান
- মোঃ সবুজ মিয়া
পুলিশ পরে শুভ দাশের বাড়ি থেকে ৩৯ ভরি ৭ আনা স্বর্ণালংকার জব্দ করে।
পুলিশের তদন্ত এবং বিবৃতি
মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুন জানিয়েছেন, “শুভ দাশ নিজের দোকানে স্বর্ণ লুটের মূল হোতা। তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের স্বর্ণ আত্মসাতের জন্য দুর্বৃত্তদের ভাড়া করেছিলেন। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তাঁর খরচ ছিল ৪৫ হাজার টাকা। এই পরিকল্পনা দুর্গাপূজার বন্ধের পর দোকান খোলার দিন বাস্তবায়িত হয়।”
ওসি এসএম আমান উল্লাহ জানান, “এই ঘটনার পেছনে আর কোনো উদ্দেশ্য বা অন্যদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত এখনও চলমান।”
মানিকগঞ্জে এই ধরনের ঘটনা বিরল। সাধারণত স্বর্ণালংকার চুরি ঘটে বাহির থেকে দুর্বৃত্তদের দ্বারা, কিন্তু এই ঘটনায় দোকান মালিক নিজেই জড়িত ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের পরিকল্পিত চুরির ঘটনা সামাজিকভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, স্বর্ণালংকারের মূল্যমানের কারণে শহরের স্বর্ণকারপট্টিতে নিরাপত্তা সবসময়ই চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকে। তবে দোকানের ভিতরে এমন নাটক সাজানো একটি নতুন উদাহরণ।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
পুলিশ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। গ্রাহকরা দোকানদারের প্রতি আরও সজাগ হবেন। এছাড়া এই ধরনের সাজানো ডাকাতির ঘটনা স্থানীয় নিরাপত্তা নীতি আরও কঠোর করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলেন, “দোকান মালিক নিজেই এই ধরনের অপরাধে জড়িত হলে ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আইন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ প্রয়োজন।”
তদন্তকারী অফিসাররা আরও সতর্ক করেছেন, এমন পরিকল্পিত অপরাধে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। তাই পুলিশ এখনো বিস্তারিত তদন্ত চালাচ্ছে।
মানিকগঞ্জ শহরের এই স্বর্ণ লুটের নাটক প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোকান মালিকসহ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা অপরিহার্য।
এম আর এম – ১৬৫৭,Signalbd.com