আঞ্চলিক

উপদেষ্টাকে দেখাতে তড়িঘড়ি করে চলছে সড়ক মেরামত

Advertisement

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) তড়িঘড়ি করে মেরামতকাজ শুরু করেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এটি মূলত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের আসন্ন পরিদর্শনের কারণে করা হচ্ছে, প্রকৃত সংস্কারের উদ্যোগ নয়।

ঘটনার বিস্তারিত

সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় তিন স্তরে ইট ও বালু বিছিয়ে সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। এই অংশে গোলচত্বর থেকে সিলেটমুখী কুট্টাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেরামতকাজে মোট চার লাখ ইট ব্যবহৃত হচ্ছে।

সওজ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাজটি করা হচ্ছে জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য, এবং ইট সরানো হবে না। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, এটি অস্থায়ী ব্যবস্থা এবং উপদেষ্টার পরিদর্শন শেষে আবার রাস্তা খোঁড়া হতে পারে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশ দীর্ঘদিন ধরে যানজটে ভুগছে। আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০.৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ আট বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশীয় অর্থ ও ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ঠিকাদাররা কাজ ছেড়ে চলে যান, এবং কিছু মালামালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার পরে অতিরিক্ত ১৬৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।

জনদুর্ভোগ ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে হঠাৎ কাজ শুরু করা হচ্ছে। ইট ও বালুর স্তূপ রাস্তার মধ্যে রাখা হওয়ায় যানজট আরও বেড়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খান সাদাত বলেন, “এক বছর ধরে মানুষ দুর্ভোগ সহ্য করছে, অথচ তখন সড়ক বিভাগ মাথাব্যথা পায়নি। এখন উপদেষ্টা আসছেন বলে হঠাৎ কাজ শুরু। এভাবে অর্থের অপচয় হচ্ছে।”

সরকারি ও প্রশাসনিক মন্তব্য

সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা তিন স্তরের ইট বিছানোর কাজ করছি। এটি স্থায়ী সমাধানের অংশ।”

প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, স্থানীয় সড়ক বিভাগ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ মিলে সড়কের ৬০০–৭০০ মিটার অংশের মেরামত কাজ করছেন। চার লেন প্রকল্পের আওতায় এখনও কাজ শুরু হয়নি।

পরিসংখ্যান ও প্রকল্প অবস্থা

সরাইল বিশ্বরোড অংশে গোলচত্বর এলাকায় ১২ মিটার প্রস্থ ও ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সিলেটমুখী অংশে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ইট ও বালু বিছানো হচ্ছে। এই উদ্যোগ আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের স্থায়ী উন্নয়নের অংশ।

প্রকল্পের মোট বাজেট ৫,৭৯১ কোটি টাকা, এবং এটি ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বিশ্লেষণ ও মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক মেরামত কাজের গতি ধীর হওয়ার পেছনে প্রশাসনিক দেরি ও অর্থায়নের জটিলতা মূল কারণ। তারা বলেন, “উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে হঠাৎ কাজ করা একটি দৃশ্যমান পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। প্রকৃত জনদুর্ভোগ হ্রাসের জন্য ধারাবাহিক ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন।”

সরাইল বিশ্বরোডের অস্থায়ী মেরামত কাজ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তড়িঘড়ি করে শুরু করা হলেও, স্থানীয়রা এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। ভবিষ্যতে সড়ক মেরামতের জন্য পরিকল্পিত ও নিয়মিত উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এম আর এম – ১৬৪৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button