
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে অপহৃত এক ব্যবসায়ী মো. মকবুলকে মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছেন তার স্বজনরা। মুক্তিপণের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হওয়ায় পরিবারের মধ্যে আনন্দ ও শঙ্কা মিলেমিশে দেখা দিয়েছে।
অপহরণের ঘটনা ও উদ্ধার প্রক্রিয়া
সোমবার (৬ অক্টোবর) ভোরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মকবুলকে অপহরণ করা হয়। বাড়ি থেকে কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা মকবুলকে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন ব্যক্তি জোরপূর্বক তুলে নেন। অপহরণকারীরা তার চোখ বাঁধা এবং হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।
অপহরণকারীরা পরে পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। স্বজনরা নিরুপায় হয়ে ৬০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। মুক্তিপণ পাওয়ার পর অপহরণকারীরা মকবুলকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর এলাকায় ফেলে দেন। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় ফিরিয়ে দেন।
অপহৃত ব্যবসায়ীর পরিচিতি ও পেশা
মকবুল (৩৮) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আলমপুরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় কসাই এবং বিভিন্ন স্থানের গরু ও খাসির ভুঁড়ি সংগ্রহ করে পরে বিক্রি করেন। তার বড় ভাই মো. শাহ আলম জানান, মকবুল প্রতিদিনের মতো সোমবারও কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাচ্ছিলেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী এবং ব্যবসায়িক অংশীদাররা জানান, মকবুল একজন পরিচিত ও দায়িত্বশীল ব্যবসায়ী। তার অপহরণ এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ ও হাসপাতালের বক্তব্য
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, “মকবুল জরুরি বিভাগের মাধ্যমে চিকিৎসা পেয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় অবগত করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, অপহরণকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর। পুলিশের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অপহরণকারীরা মোবাইল ও সিম ভেঙে ফেলেছে, যাতে পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়।
স্বজনদের বক্তব্য ও দাবি
মকবুলের বড় ভাই মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের জানান, “আমরা নিরুপায় হয়ে অপহরণকারীদের নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তিপণ প্রদান করেছি। আমাদের আশা, ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন ঘটনা মুখোমুখি না হয়।”
পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন অপহরণকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।
অপহরণের প্রভাব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
অপহরণের ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়িক সম্প্রদায় ও এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকা এবং আশেপাশের অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মনোবল কমাতে পারে এবং ছোট ব্যবসায়িক লেনদেনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
পূর্ববর্তী ঘটনা ও নজরদারি
নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের অপহরণ পূর্বেও ঘটেছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে মুক্তিপণ নেওয়ার ঘটনা কিছু বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরে কয়েকটি অপহরণ মামলা রেকর্ড হয়েছে, যা নিরাপত্তা ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও, এ ধরনের ঘটনায় এখনও প্রতিরোধ কাঠামো সম্পূর্ণ কার্যকর হয়নি।
বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের মতামত
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপহরণ এবং মুক্তিপণ দাবি করা একটি গুরুতর অপরাধ। তাদের মতে, পরিবারকে বাধ্য করা বা অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান নয়।
একজন আইনজ্ঞ বলেন, “পরিবারকে প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। মুক্তিপণ প্রদান করলে অপরাধীদের উৎসাহিত করা হয়।”
অপরদিকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নজরদারি জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন।
মকবুলের অপহরণ ও মুক্তিপণের মাধ্যমে উদ্ধার একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। পরিবার ও এলাকার লোকজনের নিরাপত্তা, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে চিন্তাভাবনা জাগিয়েছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে কার্যকর আইন প্রয়োগ, পুলিশি তৎপরতা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য।
এম আর এম – ১৬৪৭,Signalbd.com