
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে এবং মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং শুরু করেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়রা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি ও নদী তীরবর্তী পরিস্থিতি
রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপরে রেকর্ড করা হয়। পাউবো জানিয়েছে, বিপৎসীমা অতিক্রমের কারণে নদীর পানি তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। নদী তীরবর্তী অনেক ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে এবং গবাদী পশুপাখিদের জন্যও বিপদ তৈরি হচ্ছে।
তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খোলা হয়েছে পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু উজান থেকে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পানি স্থিতিশীলভাবে কমার সম্ভাবনা কম। পাউবো স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে এবং জরুরি প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বারবার আহ্বান জানিয়েছে।
তিস্তা নদী বরাবরের মতো বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে প্রবাহিত পাহাড়ি ঢলের কারণে বিপৎসীমা অতিক্রম করে থাকে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত এই পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করেছে।
পূর্বের বছরের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, নদীর পানি দীর্ঘ সময় বিপৎসীমার ওপরে থাকলে ফসল, বাড়িঘর ও স্থানীয় অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন আগেভাগে সতর্কতা জারি করে থাকে।
প্রভাব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
তিস্তার পানি বৃদ্ধি এবং চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হওয়ার কারণে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন। নদীর তীরে বসবাসরত মানুষরা নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা রোপা আমন, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শায়খুল আরিফিন জানিয়েছেন, পানি যদি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে এলে ক্ষতি সীমিত থাকবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদী ভাঙনের আশঙ্কায় তারা সারারাত জেগে রাখছেন এবং জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরতে প্রস্তুত রয়েছেন।
পানি নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
পাউবো জানিয়েছে, তিস্তা ব্যারেজের সব জলকপাট খোলা হয়েছে যাতে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এছাড়া রেড অ্যালার্ট জারি করে নিম্নাঞ্চলের মানুষদের সতর্ক করা হয়েছে। পাউবো এবং স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং করে নদী তীরবর্তী এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে থাকাকালে স্থানীয়রা যেন কখনও নদীর তীরে ঘোরাফেরা না করেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে নিম্নাঞ্চলে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে চলে গেছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের মানুষের জন্য সতর্কতার সময় এসেছে। প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরতে বারবার আহ্বান জানিয়েছে। পরবর্তী কয়েক দিনে পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা মূলত উজান থেকে আসা ঢল এবং স্থানীয় বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ১৬৩৪,Signalbd.com