আঞ্চলিক

উখিয়ায় অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও ইয়াবাসহ ৪ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

Advertisement

কক্সবাজারের উখিয়ায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে চারজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে উখিয়া থানা পুলিশ। অভিযান চলাকালে তাদের কাছ থেকে দুটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি কার্তুজ এবং দুই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

ভোরে পালংখালীতে বিশেষ অভিযান

রোববার (৫ অক্টোবর) ভোরে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মরাগাছতলা এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশ আগেই কিছু গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল যে, এই এলাকায় মাদক ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সক্রিয় কিছু সন্ত্রাসী অবস্থান করছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, “মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর রয়েছে। যে কেউ এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলে, আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়

এই অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:

  • বালুখালী এলাকার ফরিদ আলমের ছেলে মো. কায়সার (২১)
  • একই এলাকার মো. আলমের ছেলে ফরিদ আলম (৪৭)
  • ১১নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৃত নুর কবিরের ছেলে ফোরকান (২৩)
  • ১২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, মরাগাছতলা এলাকার জোস মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল কাদের (২০)

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায় লিপ্ত ছিল। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসা এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সরবরাহ তাদের প্রধান কাজ ছিল।

অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার

উখিয়া থানার একটি আভিযানিক দল ভোর ৫:৩০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে মরাগাছতলা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের সময় উদ্ধার করা হয়:

  • দুটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র
  • পাঁচটি কার্তুজ
  • দুই হাজার পিস ইয়াবা

পুলিশ জানায়, এই ধরনের অস্ত্র ও মাদক সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। তাই তারা নিয়মিত অভিযানে নিয়োজিত থাকে।

মাদকবিরোধী নীতি এবং পুলিশের পদক্ষেপ

উখিয়া থানা পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। ওসি জিয়াউল হক বলেন, “আমরা চাই না আমাদের এলাকার যুবসমাজ মাদকের শিকার হোক। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে তাদের সহযোগী চক্রও চিহ্নিত করা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, “মাদক ব্যবসায়ীরা আগে থেকে পুলিশের নজর এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত, তবে সাম্প্রতিক এই অভিযান তাদের জন্য বড় ধাক্কা।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

পালংখালী ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন। তারা মনে করেন, এই ধরনের অভিযান এলাকার নিরাপত্তা ও শিক্ষিত যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি। একজন স্থানীয় জানান, “আমরা চাই আমাদের সন্তানরা মাদকমুক্ত পরিবেশে বড় হোক। পুলিশের এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের আশা জাগিয়েছে।”

উখিয়ার মাদক ব্যবসার পরিস্থিতি

উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ব্যবসা জোরালো। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং শহরের সংলগ্ন এলাকায় ইয়াবা ও অন্যান্য নেশাজাতীয় পদার্থের ব্যবসা চরম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ জানায়, এই ধরণের ব্যবসায়ীরা সাধারণত সশস্ত্র অবস্থানে থাকে এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে।

মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উখিয়া থানা পুলিশ নিয়মিত বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। আগের কয়েকমাসে বিভিন্ন অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানগুলো স্থানীয় যুবসমাজের জন্য শিক্ষণীয় উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে।

আইনানুগ ব্যবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

ওসি জিয়াউল হক বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। আমরা চাই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এছাড়া, পুলিশ আরও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ভবিষ্যতে বড় মাদক চক্র ভেঙে দিতে পরিকল্পনা করছে।”

উখিয়া থানা পুলিশের লক্ষ্য, মাদক ও সশস্ত্র অপরাধীদের কার্যকরভাবে দমন করা এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা।

উখিয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানের এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বলছে, তারা মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া, অভিযানগুলো নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

উখিয়ার এই বিশেষ অভিযান এক বার্তাও দেয়, যে যারা অবৈধ কার্যক্রমে যুক্ত, তাদের জন্য আর কোন ছাড় নেই। পুলিশের নজর সর্বদা তাদের উপর রয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ স্থানীয় যুবসমাজ ও সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

MAH – 13172 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button