আঞ্চলিক

খাগড়াছড়িতে অনির্দিষ্টকালের জারি করা ১৪৪ ধারা রবিবার থেকে প্রত্যাহার

Advertisement

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার শনিবার (৪ অক্টোবর) এক আদেশে জানিয়েছেন, পৌরসভা ও সদর উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করা ১৪৪ ধারা আগামী রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে প্রত্যাহার করা হবে। জেলা প্রশাসক জানান, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ধারা প্রত্যাহারের সুপারিশ এসেছে।

১৪৪ ধারার বিস্তারিত

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো স্থানে জনসমাগম বা আন্দোলন সীমিত বা বন্ধ করার জন্য এই আইন প্রয়োগ করা হয়। খাগড়াছড়িতে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে এই ধারা জারি করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ধারা জারি করার মূল কারণ ছিল এক মারমা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে জুম্ম-ছাত্র জনতার সড়ক অবরোধ ও সহিংসতার ঘটনা।

উক্ত সময়, জেলা সদর ও উপজেলা পরিষদ এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে বহু দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৃহৎ সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং অস্থায়ী চৌকির মাধ্যমে জেলা শহর নিরাপত্তা চাদরে আচ্ছাদিত করা হয়।

জুম্ম ছাত্র জনতার অবরোধ ও আলোচনার প্রেক্ষাপট

জুম্ম ছাত্র জনতা পূর্বে অনির্দিষ্টকালের জন্য খাগড়াছড়ি ও গুইমারার মধ্যে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তাদের দাবির মধ্যে ছিল হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা, এবং জেলা প্রশাসনের আশ্বাস অনুযায়ী অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

২৯ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জুম্ম ছাত্র জনতার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার পর অবরোধ স্থগিত এবং ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক মারমা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ছাত্র ও যুবকরা প্রতিক্রিয়া দেখায়। পরে জেলা সদর ও গুইমারায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪৪ ধারা জারি হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় ধারা ভঙ্গ করে অবরোধ পালনের সময় তিনজন স্থানীয় পাহাড়ি যুবক নিহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য আহত হন।

এ ঘটনার পর পুলিশ তিনটি মামলা রুজু করে, যেখানে এক হাজারেরও বেশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে তদন্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের ফলে খাগড়াছড়িতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরায় স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন শান্ত এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত। স্থানীয় ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসবে।

স্থানীয়রা আশা করছেন, অবরোধের অবসান ও আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে জেলা শান্তিপূর্ণ হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ও সুষ্ঠু প্রশাসনিক পদক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ১৪৪ ধারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায় হলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য এর ব্যবহার সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে। তারা বলছেন, প্রশাসনের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হয়েছে।

বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের সুষ্ঠু সমন্বয় স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

খাগড়াছড়িতে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা রবিবার (৫ অক্টোবর) থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সচেতন উদ্যোগ এবং স্থানীয় ছাত্র নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী দিনে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য প্রশাসন ও জনসাধারণের সমন্বয় অপরিহার্য।

এম আর এম – ১৬১৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button