
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ‘ছাত্র সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মব সৃষ্টির অভিযোগে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে আসাদুর রহমান আকাশকে। তার সঙ্গে আরও দুই সহযোগীকে আটক করা হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো আসাদুর রহমান আকাশ (২৪) সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, আকাশ ‘ছাত্র সমন্বয়ক’ পরিচয় ব্যবহার করে স্থানীয় এলাকায় চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা, হুমকি-ধামকি ও মব সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। তার সঙ্গে আরও দুই সহযোগী মো. ফরিদ উদ্দিন (২৬) ও মো. রবিন (২৫) গ্রেফতার হয়েছেন।
অভিযান ও গ্রেফতারের বিস্তারিত
শনিবার ভোরে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের একটি বিশেষ অভিযানে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে আকাশ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। সেনাবাহিনী জানায়, অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন নথি ও প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা এলাকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে বর্তমানে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, আকাশ দীর্ঘদিন ধরে উত্তরা এলাকায় ভয় ও অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করছিল, যা জনমনে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, আকাশের নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং এলাকায় মারামারি, বিশৃঙ্খলা ও মব সৃষ্টি করে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের রেড চিকেন রেস্টুরেন্টে দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির, দৈনিক সকালের সময়ের জোবায়ের আহমেদ এবং বিজয় টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার এম এ আজাদের ওপর আকাশের নেতৃত্বে ২০–২৫ জন কিশোর সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা উত্তরা পশ্চিম থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুর রহিম মোল্লা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ
আকাশ ও তার সহযোগীরা নিয়মিত চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা তৈরি, মামলার মাধ্যমে অর্থ আদায় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজে জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, আকাশের কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছিল এবং এলাকায় অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি করছিল।
প্রভাব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
গ্রেফতারের পর স্থানীয়রা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আকাশের চাঁদাবাজি ও হুমকি আমাদের জীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। সেনাবাহিনীর এই অভিযান আমাদের জন্য স্বস্তির খবর।”
স্থানীয় সাংবাদিকরা বলেন, এই অভিযান সাংবাদিকদের ওপর চলা সন্ত্রাসী হুমকি ও হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তারা আশা করেন, এ ধরনের ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।
বিশেষজ্ঞ মতামত
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় এলাকায় চাঁদাবাজি, মব সৃষ্টি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়। তারা মনে করেন, প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে এই ধরনের অভিযান পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
উত্তরায় ‘ছাত্র সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আসাদুর রহমান আকাশ ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে উত্তরা এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে এবং স্থানীয়রা নিরাপদ বোধ করবে।
এম আর এম – ১৬১৬,Signalbd.com