আঞ্চলিক

মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে ঝুলছিল বিদেশি ছাত্রীর লাশ

Advertisement

ঢাকার কেরানীগঞ্জে আদ-দ্বীন মোমিন মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে ঝুলন্ত অবস্থায় ভারতীয় শিক্ষার্থী নিদা খান (১৯) নামে এক ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার ভোর সোয়া ৪টার দিকে কলেজ হোস্টেল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থলের বিবরণ

নিদা খান ভারতের রাজস্থান প্রদেশের পিরোয়া ঝালয়ার এলাকার আব্দুল আজিজ খান ও ফাহিদা খান দম্পতির কন্যা। তিনি বাংলাদেশে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। জানা যায়, শনিবার তার পরীক্ষা ছিল। নকল করার অভিযোগে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই মানসিক চাপ এবং অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ মো. আকতার হোসেন বলেন, “প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা মনে হচ্ছে। শনিবার রাত আড়াইটা থেকে ভোর ছয়টার মধ্যে যে কোনো সময় এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে তদন্তে সঠিক কারণ জানা যাবে।”

হোস্টেলে মৃতদেহের অবস্থান ও উদ্ধার প্রক্রিয়া

নিদা খানের হোস্টেল রুমে সহপাঠীরা তার ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পায়নি। পরে রাত ২টার দিকে সহপাঠীরা বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানান। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিকল্প চাবি ব্যবহার করে রুমের দরজা খোলে এবং ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পায়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সি আইডির ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, নিদা খান একাকী ছিলেন এবং ঝুলন্ত অবস্থায় তার রুমের দরজার ভিতর পাওয়া গেছে।

শিক্ষার্থীর জীবন ও পরিবারিক প্রেক্ষাপট

নিদা খান বাংলাদেশে নতুন পরিবেশে একাকী অবস্থান করছিলেন। পরিবার জানিয়েছে, তিনি খুবই প্রতিশ্রুতিশীল ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী ছিলেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় মানসিক চাপ এবং হঠাৎ পরীক্ষার কারণে বহিষ্কারের ঘটনার কারণে তার মানসিক অবস্থা অতিরিক্তভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।

পরিবারের একজন সদস্য বলেন, “আমাদের কন্যা খুবই বুদ্ধিমান ও দায়িত্বশীল ছিল। হঠাৎ এই ঘটনা আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আমরা দ্রুত ময়নাতদন্তের মাধ্যমে সত্যতা জানার অপেক্ষায় আছি।”

কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবৃতি

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তারা তদন্তে সহযোগিতা করছে এবং পুলিশের সঙ্গে পুরো তথ্য শেয়ার করেছে। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক সহায়তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

নিদা খানের এই মর্মান্তিক মৃত্যু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক চাপের বিষয়টি সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। অনেক শিক্ষার্থী ও পিতামাতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ মনোযোগ এবং মানসিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।

ময়নাতদন্ত ও পরবর্তী প্রক্রিয়া

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিদা খানের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা মৃতদেহের অবস্থা, ঝুলন্ত অবস্থার কারণ এবং সম্ভাব্য মানসিক চাপ সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক যাচাই করছেন। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ ভারতে নেওয়ার ব্যাপারে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে নিদা খানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব পুনঃপ্রমাণ করে। সমাজে শিক্ষার্থীদের চাপ মোকাবেলা ও মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

এম আর এম – ১৫৫৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button