আঞ্চলিক

খাগড়াছড়িতে ৩ পাহাড়ি নিহত, মেজরসহ ১৩ সেনাসদস্য আহত

Advertisement

খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া গুইমারা থানার ওসিসহ অন্তত তিনজন পুলিশ সদস্য ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে। এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে সরকার।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ২৩ সেপ্টেম্বর রাতের একটি ঘটনা থেকে। ওইদিন রাত ৯টার দিকে এক কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, যা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। এর জেরে গত কয়েকদিন ধরে খাগড়াছড়ি জেলায় অবরোধ, মিছিল, সমাবেশ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। শনিবার শহরের সদর উপজেলা পরিষদ এলাকা, মহাজনপাড়া, নারিকেল বাগান, চেঙ্গী স্কোয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি চালায়।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটায় উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

হামলার পরপরই খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারা উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এছাড়া বিজিবির সাতটি প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ

এই ঘটনার কারণে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খাগড়াছড়িতে ভ্রমণে যাওয়া প্রায় দুই হাজার পর্যটকও বিপাকে পড়েন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা সাজেক ভ্রমণ থেকে আটকা পড়ে যান। পরে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পর্যটকদের শহরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং অনেকেই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান। তবে এখনো বিভিন্ন হোটেলে বিপুল সংখ্যক পর্যটক অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। স্থানীয় বাজার ও দোকানপাটেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, হামলায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, শুধু আইনগত পদক্ষেপ নয়, পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে না আনলে সহিংসতা থামবে না।

জনস্বাস্থ্য ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা ও অবিশ্বাস চলমান। এমন অবস্থায় বড় ধরনের হামলা ও হতাহতের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।

খাগড়াছড়িতে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় হতাহত হওয়ার ঘটনায় সমগ্র অঞ্চলে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসনের কড়াকড়ি ব্যবস্থা ও সেনা-পুলিশের টহল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করলেও সাধারণ মানুষের ভীতি এখনো কাটেনি। সামনে কীভাবে পরিস্থিতি মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে সরকারের পদক্ষেপ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতার ওপর।

এম আর এম – ১৫৫১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button