আঞ্চলিক

খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা, অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা বলবৎ

Advertisement

খাগড়াছড়ি এখন থমথমে। পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিনের অবরোধ, মিছিল ও সহিংসতার পর পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাপূর্ণ আকার ধারণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা এবং গুইমারা উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

এ ঘটনায় জেলা জুড়ে সেনা, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংঘর্ষ ও সহিংসতার বিস্তারিত

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে সদর উপজেলা পরিষদ, মহাজনপাড়া, নারিকেলবাগান, চেঙ্গী স্কোয়ার ও শহীদ কাদের সড়কে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

এই সময় নারিকেলবাগান ও স্বনির্ভর এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। অন্তত ২৫ জন আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

রাতে আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। খবর পাওয়া গেছে, বৌদ্ধবিহারে নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছিল তিন পাহাড়ি যুবক, যাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে।

পর্যটকরা আটকা পড়েন সাজেকে

সহিংসতার কারণে সাজেক ভ্রমণে আসা প্রায় দুই হাজার পর্যটক আটকা পড়েন। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। পরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাদের খাগড়াছড়ি হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার সূচনা

এই সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক পাহাড়ি ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই শয়ন শীল (১৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মূল অভিযুক্তদের সবাইকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।

অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতা ব্যানারে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। অবরোধ চলাকালে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। এতে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে।

আলুটিলায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ও নারানখাইয়া এলাকায় একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।
পরে রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর তা প্রত্যাহারের ঘোষণা এলেও পুনরায় অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা আসে।

প্রশাসনের বক্তব্য

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেছেন,

“বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।”

অন্যদিকে জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান,

“পরিস্থিতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

১৪৪ ধারা কী?

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা থাকলে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করতে পারেন। এ ধারা জারি হলে—

  • এক জায়গায় চার বা তার বেশি লোক সমবেত হওয়া যাবে না।
  • মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ হয়।
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে।

অর্থাৎ, নাগরিকদের চলাফেরার উপর সীমিত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যাতে বড় ধরনের সংঘাত এড়ানো যায়।

পাহাড়ি অঞ্চলে উত্তেজনার পটভূমি

খাগড়াছড়ি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই জাতিগত ও সামাজিক উত্তেজনা রয়েছে। এর আগে জমি দখল, সম্পদ নিয়ে বিরোধ, এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় একাধিকবার সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনায় স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে ছাত্রসমাজ ও বিভিন্ন পাহাড়ি সংগঠন অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন,

  • “ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং আসামিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।”
  • অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, ভাঙচুর ও সংঘর্ষে তাদের দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  • অভিভাবকরা সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

সার্বিক পরিস্থিতি

বর্তমানে খাগড়াছড়ি শহর ও আশপাশের এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মানুষ অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সেনা, বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ টহল জোরদার করেছে।
অপরদিকে পাহাড়ি সংগঠনগুলো জানিয়েছে, যতক্ষণ না অপরাধীদের সবাই গ্রেপ্তার হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

একটি জঘন্য অপরাধকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জেলায় যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। প্রশাসন বলছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তবে মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে উত্তেজনা প্রশমিত হবে না।

MAH – 13037 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button