
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের কোলা গ্রামে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে বাবার মরদেহ দাফনে বাধা দিয়েছে দুই পক্ষের সন্তানরা। পুলিশ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় মৃত্যুর ১০ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন করা হয়।
ঘটনায় বিস্তারিত
প্রয়াত লেদু দেওয়ান (৮০) শুক্রবার সকালে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি দুই সংসারে মোট ১০ সন্তান রেখে গেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানদের নামে নিজের সব সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দেন।
মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা দাফনের আয়োজন শুরু করলে প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা সম্পত্তি ভাগ না করা পর্যন্ত বাধা দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে কাতলামারি পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই ইকবাল হোসেন ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
স্থানীয়দের বিবৃতি
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। একপর্যায়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের ৭০ শতক জমি দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের পিতাকে জিম্মি করে দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানরা সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করেছেন। অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা দাবি করেন, লেদু দেওয়ান জীবিত অবস্থায় স্বেচ্ছায় সম্পত্তি দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় সম্পত্তি সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব প্রায়ই পরিবারের ভেতর বিবাদ এবং সহিংসতায় রূপ নেয়। ঝিনাইদহের এই ঘটনা তারই একটি উদাহরণ। বিশেষ করে দুটি সংসার ও বহু সন্তান থাকা পরিবারের ক্ষেত্রে সম্পত্তি বিতরণের বিষয়টি অতিরিক্ত জটিল হয়ে ওঠে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এএসআই ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ঘটনায় বড় ধরনের অঘটনের শঙ্কা ছিল। স্থানীয়দের সহায়তায় উভয় পক্ষের মধ্যে লিখিত সমঝোতার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং রাত ৮টার দিকে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন পরিবারগুলোর কাছে অনুরোধ করেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝামেলা ও উত্তেজনা এড়াতে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে।
প্রভাব ও বিশ্লেষণ
এই ধরনের ঘটনা শুধুই ব্যক্তিগত নয়, বরং পুরো গ্রামের জন্য সতর্কবার্তা। সম্পত্তি বিতরণ সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব পরিবারকে সামাজিক ও মানসিকভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধ নথি ও লিখিত সমঝোতার মাধ্যমে সম্পত্তি বিতরণ করা গেলে এই ধরনের সংঘর্ষ কমানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ মতামত
সামাজিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিবারিক সম্পত্তি বিতরণের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের নথিভুক্ত মধ্যস্থতা ও স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধান অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া, পরিবারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এড়াতে সম্পত্তি বিতরণ পূর্বেই স্পষ্ট নথিতে করা উচিত।
শুধু প্রশাসনের মধ্যস্থতাই নয়, পরিবারের অভিভাবক ও সন্তানদের সচেতনতা ও সহমর্মিতা প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।
ঝিনাইদহে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধে বাবার মরদেহ দাফনে বাধা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এটি পরিবারের মধ্যে সম্পত্তি বিতরণের গুরুত্ব ও সুষ্ঠু সমঝোতার অপরিহার্যতা তুলে ধরে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবারগুলোর জন্য এটি একটি শিক্ষা, যে নথিভুক্ত ও লিখিত সমঝোতা ছাড়া এমন দ্বন্দ্বের সমাধান কঠিন।
এম আর এম – ১৫৪৪,Signalbd.com