আঞ্চলিক

জোর করে হালিম উদ্দিনের চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় এবার মামলা

Advertisement

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় হালিম উদ্দিন ফকিরের চুল ও দাড়ি জোরপূর্বক কেটে দেয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশে মামলা হয়েছে। মামলায় চুল কেটে দেয়া ব্যক্তিসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে, এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও চার-পাঁচজনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলের বিস্তারিত

ঘটনা ঘটে তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে। ভিডিওতে দেখা যায়, বয়স্ক হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০) জোরপূর্বক চুল ও দাড়ি কেটে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বারবার বলতে শোনা যায়, “আল্লাহ, তুই দেহিস।” 

মামলাটি দায়ের করেছেন হালিম উদ্দিনের ছেলে মো. শহিদ মিয়া আকন্দ। তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ টিপু সুলতান জানিয়েছেন, মামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

হালিম উদ্দিন দীর্ঘ ৩৪–৩৭ বছর ধরে মাথায় জট রেখেছিলেন। তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) এবং শাহ পরান (রহ.)-এর ভক্ত। আগে তিনি কৃষক পেশায় ছিলেন, বর্তমানে ফকিরি হালে আছেন এবং সামান্য কবিরাজিও করেন।

গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে এসে হালিম উদ্দিনের মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কাটে। স্থানীয় সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, বৃদ্ধ বয়স্ক ব্যক্তির সাথে এমন আচরণ সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত নয়। অনেকেই ভিডিওটি দেখার পর মানবিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মামলার বাদী মো. শহিদ মিয়া আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, “আমার বাবার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, আমরা আগে কিছুই করতে পারিনি। দেশের অনেক মানুষ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি এবং আশা করছি যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা বিচার পাবেন।”

আইনগত প্রক্রিয়া

মামলায় সাতজনকে সরাসরি আসামি করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, “যারা চুল কেটেছিল তারা মূলত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। মামলার ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

প্রভাব

এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলেছেন, বৃদ্ধ ব্যক্তি ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত এমন ব্যাক্তির উপর জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওগুলোর কারণে দ্রুত জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়েছে।

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় হালিম উদ্দিন ফকিরের চুল ও দাড়ি জোরপূর্বক কাটার ঘটনা সামাজিক ও মানবিকভাবে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। মামলার মাধ্যমে আইনের শাসন কার্যকর হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় দেশের নাগরিক ও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো সরব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এম আর এম – ১৫৪০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button