
মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক গৃহবধূকে হত্যার পর তার স্বর্ণালংকার ও অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত রাশিদা বেগম (৫৫) পশ্চিম বাইলজুড়ি গ্রামের নিজ বাসায় একা বসবাস করতেন। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘিওর থানার ওসি (তদন্ত) কহিনূর ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত
স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, রাশিদা বেগমের স্বামীর সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর আগে বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর তিনি একাই বসবাস করতেন। জীবিকার তাগিদে তিনি কিছু সময় জর্ডানে অবস্থান করেছিলেন এবং প্রায় ১০ বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। তাঁর একমাত্র কন্যা বর্তমানে জর্ডানে থাকছেন।
ঘটনার দিন, রাশিদা বেগমের ভাসতি ও নাতি বাড়িতে বেড়াতে আসেন। দুপুরে একসাথে খাওয়া-দাওয়ার পর তারা পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে একদল ডাকাত তাদের বাসায় প্রবেশ করে।
ডাকাতি ও হত্যার অভিযোগ
পরিবারের দাবি অনুযায়ী, ডাকাতরা রাশিদা বেগমকে পাশের রুমে হত্যার পর তার হাতে থাকা অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। ভাসতি ও নাতি জানিয়েছেন, ডাকাতরা তাদেরও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-মুখ বাঁধে। ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর তারা নিজেদের বাঁধন খুলে পাশের রুমে গিয়ে রাশিদা বেগমকে মৃত অবস্থায় পান। পরে প্রতিবেশীদের জানিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
পুলিশের তদন্ত
ঘিওর থানার ওসি (তদন্ত) কহিনূর ইসলাম বলেন, “এ ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনই বলা সম্ভব নয় যে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি ডাকাতির উদ্দেশ্যে সংঘটিত ঘটনা। নিহতের ভাসতি ও নাতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি।”
নিরাপত্তা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘিওর উপজেলার এই হত্যাকাণ্ড এলাকায় শোক ও উদ্বেগের ছায়া ফেলেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা এলাকার সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তোলে। অনেকেই পুলিশের দ্রুত ব্যবস্থা এবং প্রতিকার কামনা করছেন।
এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এক জন বৃদ্ধা নারীকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা দুঃখজনক। পুলিশ যেন দ্রুত সব তথ্য বের করে দোষীদের শনাক্ত করে।”
বিচার ও আইনগত প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সাধারণত ময়নাতদন্ত, সাক্ষ্যগ্রহণ এবং প্রাথমিক তদন্তের পর হত্যা মামলার রেকর্ড করা হয়। আইন অনুযায়ী, হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা প্রতিটি সম্ভাব্য দিক অনুসন্ধান করছে। এতে যেকোনো প্রকার স্থানীয় সংঘর্ষ, ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, অথবা ডাকাতি-লুটের দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা সমাজের জন্য একটি বড় হুমকি। আমরা চাইছি পুলিশ দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করুক।”
স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্যের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। এছাড়াও এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে বিশেষ অভিযান চালানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তদন্তের চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষা
ঘিওর থানার ওসি (তদন্ত) কহিনূর ইসলাম পুনরায় জানান, “তদন্তের পরই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে। এটি একক ঘটনা নাকি কোনো পরিকল্পিত হত্যার অংশ, তা আমরা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করব।”
প্রাথমিকভাবে, হত্যাকাণ্ডের সময় প্রমাণ স্বরূপ বাসার ভেতরের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, অস্ত্রের চিহ্ন এবং আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ আশা করছে, এই প্রমাণগুলো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দোষীদের দ্রুত সনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
ঘিওরের পশ্চিম বাইলজুড়ি গ্রামে ঘটানো রাশিদা বেগমের হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজে নিরাপত্তার সংকট এবং একক বাসিন্দাদের জন্য ঝুঁকির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। পরিবারের দাবী অনুযায়ী এটি এক পরিকল্পিত ডাকাতি হতে পারে, তবে পুলিশ এখনও রহস্য উদঘাটন করতে ব্যস্ত।
পাঠকরা আশা করছেন, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত করা হবে এবং আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। একদিকে শোক, অন্যদিকে উত্তেজনা—ঘিওরের মানুষ এখন ক্ষণিকের জন্যও শান্তিতে নেই।
MAH – 12967 I Signalbd.com