চাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ঘোষণা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত সংগঠন ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় চাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন নূর। এসময় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সমর্থক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত প্যানেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে মনোনীত হয়েছেন আব্দুর রহমান রবিন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আব্দুর রহমান এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে দায়িত্ব পেয়েছেন আমিনুল ইসলাম রাকিব।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন
ঘোষিত প্যানেলে মোট ২০টিরও বেশি পদে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক: মুহাম্মাদ শাহজাহান
- সহ সম্পাদক: মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ
- সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
- দফতর সম্পাদক: মুহাম্মাদ আকিব হোসেন
- ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক: মারজান বেগম
- সহ-সম্পাদক: ফারজানা আক্তার
- বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক: এহসানুল হক লাবীব
- গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক: রাফিক
- সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক: মুহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন
- স্বাস্থ্য সম্পাদক: মুহাম্মাদ মাঈনুদ্দিন
- মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: মুরাদ হোসাইন মূসা
- ক্যারিয়ার ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক: আবু হুরায়রা
- যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক: সোলাইমান সিকদার
- আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক: নাঈম উদ্দিন
- পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: আবিদুর রহমান
এছাড়া নির্বাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন: মুহাম্মাদ শিহাব উদ্দিন, জুয়েল রানা, সাইদুল ইসলাম, হারুনুল ইসলাম ও গাজী মাহমুদুর রহমান।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে চাকসু নির্বাচন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গড়ে তোলার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চাকসু নির্বাচন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নতুনভাবে এ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ আরও জমে উঠেছে। এর আগে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও তাদের প্যানেল ঘোষণা করেছে। ফলে এবারের নির্বাচন হবে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
প্যানেল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সমর্থক শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও কিছু শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শুধু প্যানেল ঘোষণা নয়, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রার্থীরা যাতে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা, আবাসন ও একাডেমিক সমস্যাগুলো সমাধানে গুরুত্ব দেন, সেটাই হবে তাদের মূল প্রত্যাশা।
বিশ্লেষকদের মতামত
শিক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চাকসু নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক ও শিক্ষার্থী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও প্রাণবন্ত হবে বলে মনে করছেন তারা।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি করবে। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলোকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে হবে।”
“গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই আমাদের প্যানেল ঘোষণা।” — মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন নূর, যুগ্ম সম্পাদক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন
চাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র স্পষ্ট হলো। এখন শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি থাকবে নির্বাচনী প্রচারণা ও তাদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতির দিকে। চাকসু নির্বাচনের ফলাফল শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং জাতীয় ছাত্র রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এম আর এম – ১৪০৭,Signalbd.com