আঞ্চলিক

সাতক্ষীরা সীমান্তে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার জব্দ

সাতক্ষীরা সীমান্তে বড় অঙ্কের ডলার জব্দ

সাতক্ষীরা সীমান্ত সবসময়ই চোরাকারবারিদের জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে বিভিন্ন সময় স্বর্ণ, মাদক, অস্ত্র, এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের চেষ্টা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাত ৯টার দিকে বিজিবি এক গোপন অভিযানে মাদরা সীমান্তের তেঁতুলতলা এলাকা থেকে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার জব্দ করে।

এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জব্দের ঘটনাটি শুধু সাতক্ষীরার স্থানীয় বাসিন্দাদের নয়, বরং সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন করে সতর্ক করেছে।

ঘটনার বিবরণ

বিজিবি সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছিল। সেই সময় তেঁতুলতলা এলাকায় একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটকানোর চেষ্টা করলে সে দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় তার হাতে থাকা একটি পলিথিন ব্যাগ ফেলে যায়। ব্যাগটি উদ্ধার করে তল্লাশি চালালে তিন বান্ডিলে একশো ডলারের নোট পাওয়া যায়। মোট ৩০ হাজার ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশরাফুল হক গণমাধ্যমকে জানান, উদ্ধার হওয়া ডলারের বাংলাদেশি মুদ্রায় মূল্য প্রায় ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা

সীমান্তে ডলার পাচারের প্রবণতা

বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত বহুদিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের অবৈধ লেনদেনের জন্য কুখ্যাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বর্ণ ও মাদকের পাশাপাশি এখন ডলার পাচারও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডলার সংকটের সময় পাচারকারীরা বিভিন্ন কৌশলে বিদেশি মুদ্রা ভারতে পাচারের চেষ্টা করে থাকে।

বাংলাদেশে যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে থাকে, তখন এই ধরনের পাচারের ঘটনা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে ডলার সংকট এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মতো সমস্যা আরও তীব্র হতে পারে।

কেন পাচারকারীরা ডলার পাচারে ঝুঁকছে?

ডলার পাচারের মূল উদ্দেশ্য সাধারণত কালোবাজারে বেশি মুনাফা অর্জন। সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় ভারতীয় বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি থাকায় পাচারকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নেয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক পাচারচক্রও স্থানীয় দালালদের ব্যবহার করে ডলার পাচারকে একটি নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যখন ডলার সংকট হয়, তখন এর কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। পাচারকারীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশি মুদ্রা কিনে সীমান্ত দিয়ে পাচারের চেষ্টা চালায়। ফলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কড়া নজরদারি বাড়াতে হয়।

সীমান্তে বিজিবির ভূমিকা

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) শুধু সীমান্ত সুরক্ষায় নয়, বরং মাদক, স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচার রোধে সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় তাদের অভিযান অব্যাহত থাকে।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই সারাদেশের সীমান্ত থেকে কয়েক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। এইসব অভিযান দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের চোরাচালান চলে আসছে। অনেক সময় সাধারণ মানুষও পাচারকারীদের ভয়ে কিছু বলতে সাহস পান না। তবে বিজিবির সাম্প্রতিক তৎপরতায় সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালু রাখলে এ ধরনের অপরাধ কমে যাবে।

উদ্ধারকৃত ডলারের পরবর্তী প্রক্রিয়া

আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জব্দ হওয়া ডলার সাতক্ষীরা ট্রেজারি অফিসে জমা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাধারণত এসব জব্দকৃত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব

বাংলাদেশ বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, ডলার সংকট ও বৈদেশিক ঋণের চাপে অর্থনীতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সীমান্ত দিয়ে ডলার পাচার দেশের অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পাচারকারীদের কারণে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যায় না, বরং দেশে অর্থপাচারের একটি চক্র সক্রিয় হয়। এর ফলে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং অবৈধ অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন

বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ইতিমধ্যেই পাচার প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু বিজিবি নয়, কাস্টমস, পুলিশ, র‌্যাব এবং আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

একইসঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে জনসচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। কারণ পাচারকারীরা প্রলোভন দেখিয়ে অনেক সময় সীমান্ত এলাকার দরিদ্র মানুষকে ব্যবহার করে থাকে। তাই শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই পাচার প্রতিরোধ আরও কার্যকর হবে।

সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার জব্দ নিঃসন্দেহে একটি বড় সাফল্য। তবে এটি শুধু একটি ঘটনা নয়; বরং সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের বড় চিত্রের ছোট অংশ। দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সীমান্তে আরও নজরদারি এবং বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

MAH – 12878  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button