আঞ্চলিক

দুই দফায় মাথায় তুলে আছাড় মেরে শিশুকে হত্যা, ঘাতকের বাড়িতে আগুন

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় ভয়াবহ একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মগধরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় এক প্রবাসীর হাতে প্রাণ হারায় মাত্র পাঁচ বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ আলী। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত শিশুর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

ঘটনা কীভাবে ঘটল

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইতালিপ্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি শিশুটিকে কোলে তুলে প্রথমে আদর করার ভান করেন। এরপর আচমকা তাকে মাথার ওপর উঠিয়ে দুইবার মাটিতে আছাড় দেন। এতে গুরুতর আহত হয় শিশু মোহাম্মদ আলী। অচেতন অবস্থায় স্থানীয়রা দ্রুত তাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিশু ও পরিবারের পরিচয়

পাঁচ বছর বয়সী নিহত মোহাম্মদ আলী স্থানীয় অটোরিকশা চালক আবু তাহেরের ছেলে। সে নিকটবর্তী এক নুরানি মাদ্রাসার শিশু শ্রেণিতে পড়ত। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় তার মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারি থামছেই না। ছোট্ট সন্তানের এমন নির্মম পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না শিশুটির বাবা-মা।

ঘটনার পেছনের কারণ

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, সম্প্রতি আবু তাহেরের পরিবারের সঙ্গে প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। সেই বিরোধের জের ধরেই বুধবার সকালে জাহাঙ্গীর প্রতিশোধ নিতে শিশুটিকে লক্ষ্য করেন। প্রতিবেশীরা ধারণা করছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে শিশুটির ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

শিশুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার বসতঘরের একটি অংশ ভস্মীভূত হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে স্থানীয়দের ক্ষোভ এখনো প্রশমিত হয়নি।

পুলিশের অবস্থান

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী জানান, অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়েছে। শিশুহত্যার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তার জানা নেই। তিনি বলেন, “একটি শিশুর প্রতি এমন নির্মম আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অপরাধী আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।”

বাংলাদেশে পারিবারিক বা প্রতিবেশী বিরোধের জেরে প্রায়ই সহিংসতা দেখা যায়। অনেক সময় সেই সহিংসতার শিকার হয় নিরীহ মানুষ, এমনকি শিশু পর্যন্ত। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ক্ষুদ্র বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির মতো ঘটনা আমাদের সামাজিক অস্থিরতা ও সহনশীলতার অভাবকে প্রকাশ করে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় পর্যায়ে সালিশ ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সমাজে এর প্রভাব

একটি শিশুর মৃত্যুতে যেমন পরিবার ভেঙে যায়, তেমনি পুরো গ্রামও আতঙ্ক ও শোকে নিমজ্জিত হয়। অভিভাবকরা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। শিশুদের প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশে নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা যায়। এমন পরিস্থিতি প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে মাত্র পাঁচ বছরের এক শিশুর এমন নির্মম মৃত্যু আমাদের সমাজের জন্য গভীর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। একটি তুচ্ছ বিরোধ যদি প্রাণহানিতে রূপ নেয়, তবে সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কতটা দ্রুত হয় এবং অপরাধী কীভাবে শাস্তি পায়।

এম আর এম – ১৩৮৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button