সাতকানিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ১০, সিগারেটই মূল কারণ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নের বৈলতলি ইউনুস মার্কেটে বুধবার সকালে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দোকান মালিকসহ ১০ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ঠিক সেই সময়, যখন এক শ্রমিক সিগারেট খাচ্ছিলেন।
ঘটনার সময়সূচি ও পরিস্থিতি
স্থানীয় সূত্র এবং চন্দনাইশ ফায়ার স্টেশনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে মাহবুবুর রহমানের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডারের বোতল আনলোড করার সময় এ বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয়রা জানান, শ্রমিকদের মধ্যে একজন সিগারেট খাচ্ছিলেন। সিগারেটের আগুনের ছোট শিখা গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল মুহূর্তেই আগুনে ঢেকে যায়।
দগ্ধদের পরিচয়
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকালে দগ্ধদের মধ্যে ছিলেন:
- মাহবুবুর রহমান, দোকান মালিক, বয়স ৪৫ বছর
- মোঃ সৌরভ রহমান, বয়স ২৫
- মোহাম্মদ কফিল, বয়স ২২
- মোহাম্মদ রিয়াজ, বয়স ১৭
- মোহাম্মদ ইউনুস, বয়স ২৬
- মোহাম্মদ আকিব, বয়স ১৭
- মোঃ হারুন, বয়স ২৯
- মোহাম্মদ ইদ্রিস, বয়স ৩০
- মোহাম্মদ লিটন, বয়স ২৮
- মোহাম্মদ ছালে, বয়স ৩৩
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, দগ্ধদের অবিলম্বে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে। মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের অবস্থার মধ্যে কিছুজনের দগ্ধকালে গুরুতর হলেও আশঙ্কা নেই।
বিস্ফোরণের কারণ ও নিরাপত্তা ত্রুটি
চন্দনাইশ ফায়ার স্টেশন জানিয়েছে, এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে যখন গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণ বা ব্যবহারে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বিশেষ করে দোকানে ধূমপান করা, অগ্নিসংবেদনশীল জিনিসপত্র রাখা বা সিলিন্ডার ঠিকমতো সংরক্ষণ না করা এই ধরনের বিস্ফোরণের বড় কারণ।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন, দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও, নিরাপত্তা নিয়ম না মানার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
পূর্বঘটনার প্রেক্ষাপট
চট্টগ্রামে এর আগেও শিপইয়ার্ড, রাস্তা ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৫ সালের শুরুতে চট্টগ্রাম শিপইয়ার্ডে একটি বিস্ফোরণে ৮ জন শ্রমিক দগ্ধ হন। এছাড়াও, রাস্তা ও নদীতে অবৈধ কার্যক্রমের কারণে আগুন ও দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপদ ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক স্থানগুলোতে নিয়মিত তদারকি অত্যন্ত জরুরি।
নিরাপত্তা পরামর্শ ও জনসচেতনতা
- গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণে অবশ্যই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
- ধূমপান ও আগুনের উৎসকে গ্যাস সিলিন্ডারের কাছাকাছি রাখা যাবে না।
- নিয়মিত সিলিন্ডারের লিক পরীক্ষা করা জরুরি।
- দোকান বা গুদামে অগ্নিনিরোধী সরঞ্জাম রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।
- জরুরি পরিস্থিতিতে প্রথমে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে সিগারেট ধোঁয়া বা খোলা আগুন রাখা সবচেয়ে বড় ভুল। এটি প্রায়শই জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা মান বজায় রাখা জরুরি।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, প্রশাসনের তদারকি বাড়াতে হবে, যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি দোকানগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ম মানা প্রায়শই উপেক্ষিত হয়।
এ ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বাড়ানো হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এছাড়াও, প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি, শিক্ষামূলক প্রচারণা ও জরুরি সেবা ব্যবস্থা সবসময় প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।
MAH – 12862 Signalbd.com