নেত্রকোনায় দুই প্রতিমা ভাঙচুর, স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ

নেত্রকোনার সদর উপজেলার কান্দুলিয়া কালীবাড়ি পূজামণ্ডপে সোমবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টার মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা দুইটি প্রতিমা ভাঙচুর করে। স্থানীয়দের নজরে আসে, প্রতিমার কার্তিকের ডান হাত এবং অসুরের বাঁ হাত ভাঙা অবস্থায়। এছাড়া অসুরের গলার অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় কমিটি ঘটনাটি পুলিশকে জানান।
ঘটনা ও পুলিশি তদন্ত
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিমাশিল্পীরা কয়েক দিন ধরে মাটির কাজ সম্পন্ন করে চলে গেছেন। এরপর প্রতিমাগুলো ত্রিপল ও কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কেউ এসে প্রতিমাগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
মন্দির কমিটির সভাপতি মিন্টু রায় বলেন, “প্রতিমাগুলোর এখন শুধু রং করা বাকি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁরা আমাদের এই পূজায় সার্বিক সহযোগিতা করেন। এ ধরনের ঘটনা মানসিকভাবে খুব কষ্টদায়ক।”
কান্দুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ান মঞ্জু বলেন, “মন্দিরে হামলা বা প্রতিমা ভাঙচুর অন্যায়। আমরা চাই যে, এই ধরনের কাজের জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমাদের এলাকার মানুষ সব ধর্মের উৎসবে মিলেমিশে আনন্দ করে।”
পূজার প্রেক্ষাপট
শারদীয় দুর্গোৎসব স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। প্রতিমাশিল্পীরা প্রতিটি বছর অস্থায়ী মণ্ডপে মাটির প্রতিমা নির্মাণ করেন। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ও এই উৎসবে সহমর্মিতা প্রদর্শন করে, যার মাধ্যমে সম্প্রদায়িক ঐক্য দৃঢ় থাকে।
প্রতিমার রং করার কাজ বাকি থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমাগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়নি। ফলে উৎসবের আয়োজনও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আগের ঘটনার প্রেক্ষাপট
নেত্রকোনা ও এর আশেপাশের এলাকায় আগে প্রতিমা বা পূজামণ্ডপে ক্ষতি বা ভাঙচুরের ঘটনা নতুন নয়। যদিও স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেন, তবু দুষ্কৃতকারীদের শনাক্তকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সবসময় সম্ভব হয় না।
এ ধরনের ঘটনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তার উদ্বেগ ও উদ্বেগ তৈরি হয়।
বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধর্মীয় সহমর্মিতা ও সম্প্রদায়িক ঐক্য বজায় রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যাতে ধর্মীয় অনুশাসনের ওপর হামলা করতে না পারে, সে বিষয়ে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
এ ধরনের ঘটনা সমাজে নেতিবাচক বার্তা প্রেরণ করে। যদি দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও শাস্তি না দেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে আরও অনুরূপ ঘটনা ঘটতে পারে।
নেত্রকোনায় দুই প্রতিমা ভাঙচুর কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, বরং সমগ্র স্থানীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সহমর্মিতার প্রশ্ন তোলে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ছাড়া সমাজে এই ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শান্তি স্থাপনের জন্য সকল সম্প্রদায়ের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ১৩৬৭,Signalbd.com