বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা প্রকৌশলীকে মারধরের পর তুলে দিলেন সেনাবাহিনীর হাতে

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন স্থানীয় গ্রাহকেরা। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ করেও সমাধান না পেয়ে তাঁরা বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা সহকারী আবাসিক প্রকৌশলী চঞ্চল মিয়াকে মারধর করেন এবং পরে তাঁকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন। বর্তমানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।
ঘটনার বিস্তারিত
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পানছড়ির টিএন্ডটি এলাকায় অবস্থিত বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গ্রাহকেরা জড়ো হন। তাঁরা দাবি করেন, নিয়মিত মিটার রিডিং নেওয়া হলেও প্রকৃত ব্যবহার অপেক্ষা দ্বিগুণ বা তারও বেশি বিল দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তেজিত গ্রাহকেরা অফিস ঘেরাও করে প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে চান। একপর্যায়ে তর্কাতর্কি শুরু হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
গ্রাহকদের অভিযোগ
গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কর্মকর্তা–কর্মচারী অবৈধ সংযোগ দিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। সেই ক্ষতির বোঝা বহন করতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহককে।
পানছড়ি কলোনিপাড়ার বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন, “আমার বাসায় গত মাসে বিল এসেছিল ২১০০ টাকা। অথচ এই মাসে হঠাৎ করেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১০০ টাকা। অথচ বাড়িতে রয়েছে মাত্র একটি টেলিভিশন, তিনটি বাতি আর একটি ফ্যান।”
অন্যদিকে কলাবাগানের সুমন ত্রিপুরা জানান, “আমরা দুই মাস ধরে বাসায় ছিলাম না। ঘরে একটিও বাতি জ্বলে না। তবুও প্রতি মাসেই ৬-৭ শত টাকা বিল আসছে। এটা কি ন্যায্য?”
প্রকৌশলীর বক্তব্য
ঘটনার পর সহকারী আবাসিক প্রকৌশলী চঞ্চল মিয়া সাংবাদিকদের জানান, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ সংযোগ থাকার কারণে কিছু গ্রাহকের বিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আসে। তবে তিনি গ্রাহকদের সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা গ্রাহকের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে নিচ্ছি। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কারণে ভুল বিল আসতে পারে। এগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, “উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ শুনে লিখিত আকারে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে সহকারী প্রকৌশলী চঞ্চল মিয়া বর্তমানে সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।
পানছড়ি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অসন্তোষ নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয়রা অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ করে আসছিলেন। এর আগেও গ্রাহকেরা একাধিকবার বিক্ষোভ করেছেন। তবে কার্যকর সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ জমতে জমতে আজকের ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও ক্ষোভ—দুই ধরনের প্রতিক্রিয়াই দেখা গেছে। অনেকে মনে করেন, দীর্ঘদিনের ভোগান্তির প্রতিকার না পেয়ে সাধারণ মানুষ এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হয়েছেন। আবার অনেকে মনে করেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই সমাধান নয়।
এক স্থানীয় সমাজকর্মী বলেন, “সরকারি দপ্তরের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের দায় সাধারণ মানুষ বহন করতে পারে না। তবে সহিংসতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা ঠিক হয়নি।”
বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত মিটার রিডিংয়ের ভিত্তিতে সঠিক বিল প্রদান ও অবৈধ সংযোগ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। এতে শুধু বিদ্যুৎ বিভাগের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন হবে না, সাধারণ মানুষের আস্থাও কমে যাবে।
পরিস্থিতি শান্ত হলেও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ এখনো বিদ্যমান। প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যোগ ছাড়া এ সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অনেকে।
পানছড়িতে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সংঘটিত এ ঘটনা কেবল একটি উপজেলার নয়, বরং সারাদেশে বিদ্যুৎ বিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রশ্ন উত্থাপন করছে। মানুষের আস্থা ফেরাতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের ক্ষোভ যেকোনো জায়গায় বিস্ফোরিত হতে পারে।
এম আর এম – ১৩৬৬,Signalbd.com