বাংলাদেশ

গ্রেফতারে লাগবে পরিচয়পত্র, ১২ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে পরিবারকে

ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন নিয়মে গ্রেফতারের আগে পুলিশ সদস্যকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে এবং গ্রেফতারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানানো বাধ্যতামূলক হবে।

নতুন আইনি পরিবর্তন: গ্রেফতারের সময় বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র

ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) সংশোধন করে গ্রেফতারের সময় পুলিশের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নতুন নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার করতে গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের অবশ্যই নেমপ্লেট এবং আইডি কার্ড সঙ্গে থাকতে হবে এবং ব্যক্তির অনুরোধে তা দেখাতে হবে।

এই সিদ্ধান্ত এসেছে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, জনগণের মানবাধিকার রক্ষার জন্য এই পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত জরুরি ও সময়োপযোগী।

গ্রেফতারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের জানানো বাধ্যতামূলক

সংশোধিত নিয়ম অনুযায়ী, কাউকে গ্রেফতার করার পর সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার পরিবারের সদস্যদের জানানো বাধ্যতামূলক হবে। কেউ অসুস্থ হলে, সাথে সাথেই চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, “গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হলো, সেই কারণ লিখিত আকারে রাখতে হবে।”

আগে ছিল কী, এখন কী বদলাচ্ছে?

এর আগে বাংলাদেশের সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নিয়ম ছিল। কিন্তু গ্রেফতার করার সময় পুলিশকে পরিচয় দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল না।

তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের জানানো সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা থাকলেও তা বাধ্যতামূলকভাবে আইন আকারে ছিল না। এবার সেই ঘাটতি পূরণ করতে যাচ্ছে সরকার।

নতুন আইনে কী কী থাকছে?

সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে:

  • পুলিশ সদস্যের নেমপ্লেট ও আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক
  • গ্রেফতার সংক্রান্ত সব তথ্য লিখিতভাবে সংরক্ষণ
  • গ্রেফতার তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে সংরক্ষণের নির্দেশ
  • অনলাইনে বেইল বন্ড ও ডিজিটাল সমনের ব্যবস্থা
  • ৫৪ ধারার পরিমার্জন: শুধু পুলিশের সামনে অপরাধ করলেই গ্রেফতার করা যাবে, বা পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে

এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে পুলিশের ক্ষমতা যেমন আইনের আওতায় আসবে, তেমনি নাগরিকরাও নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হবেন।

বিশেষজ্ঞদের মত: জনস্বার্থেই পরিবর্তন

আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই সংশোধন দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। অনেক সময় পুলিশ পরিচয় না দিয়ে বা গ্রেফতার সংক্রান্ত ন্যূনতম নিয়ম না মেনে কাউকে আটক করে। এতে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ফারহানা কবির বলেন, “পরিচয় নিশ্চিত করা এবং পরিবারের সদস্যদের জানানো — এটি একটি মৌলিক অধিকার। এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন হলে পুলিশি হয়রানির সংখ্যা কমবে।”

অতীতে পুলিশের পরিচয় গোপন করে গ্রেফতার: কিছু উদাহরণ

গত কয়েক বছরে একাধিকবার দেখা গেছে, সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয় না দিয়ে কাউকে গ্রেফতার করেছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।

২০২৩ সালের একটি ঘটনায়, ঢাকার একটি এলাকায় একজন ছাত্রনেতাকে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয় না দিয়েই তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং হাইকোর্ট কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে পুলিশের বিরুদ্ধে।

আগামীতে কী হতে পারে?

এই আইনি পরিবর্তন যদি সংসদে অনুমোদন পায় এবং বাস্তবায়ন হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছ থেকে আরও সুরক্ষা পাবে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাগজে কলমে আইন থাকলেই হবে না — প্রয়োগের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছতা, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে আইন বাস্তবে কার্যকর হবে না।


“এখন থেকে যে পুলিশ সদস্য গ্রেফতার করতে যাবেন, তার যথাযথ আইডেনটিটি থাকতে হবে… এবং চাওয়া মাত্রই এসব দেখাতে হবে।” — ড. আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা

সারসংক্ষেপ  

সিআরপিসির সংশোধিত নিয়ম দেশের আইনি কাঠামোকে আরও মানবিক এবং জবাবদিহিমূলক করে তুলবে বলেই আশা করা যায়।

তবে সফল বাস্তবায়নের জন্য চাই কার্যকর মনিটরিং, সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং পুলিশের আন্তরিকতা।

প্রশ্ন রয়ে যায় — শুধু আইন সংশোধনেই কি সব বদলে যাবে, নাকি বাস্তবেই মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে?

এম আর এম – ০৪৯৫  , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button