আঞ্চলিক

মুঠোফোনে প্রেম, জর্ডান থেকে বগুড়ায় এনে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় জর্ডানফেরত এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশে ডেকে এনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ধুনট উপজেলার বড়চাপড়া গ্রামের ফজলুল হক (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিদেশে অবস্থানকালে মুঠোফোনে এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নারীটি বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসেন। পরে তাঁকে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কের মধ্যে জড়াতে বাধ্য করা হয়। অবশেষে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিয়ে না করায় নারী থানায় মামলা করেন।

ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০২২ সালে জীবিকার তাগিদে তিনি জর্ডান যান। বিদেশে অবস্থানকালে মুঠোফোনে ফজলুল হকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়, যা দ্রুত প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়।
প্রেমের আস্থায় তিনি ফজলুল হকের হাতে প্রায় এক লাখ টাকা দেন। বিয়ের আশ্বাসে ২০২৫ সালের ১ আগস্ট দেশে ফিরে আসেন ওই নারী। এরপর ফজলুল তাঁকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত ফাঁদে পড়লেন নারী

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফজলুল হক প্রেমিকাকে নিজের চাচাতো বোনের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আবারও শারীরিক সম্পর্ক হয়। তবে এ সময় বিয়ের জন্য চাপ দিলে ফজলুল রাজি না হয়ে কৌশলে পালানোর চেষ্টা করেন।
স্থানীয়রা পরিস্থিতি বুঝে তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরদিন দুপুরে ভুক্তভোগী নারী ধুনট থানায় গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

পুলিশের বক্তব্য

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ফজলুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পটভূমি: মুঠোফোনে প্রেম ও প্রতারণার ঝুঁকি

বর্তমানে প্রবাসে থাকা অনেক নারী-পুরুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এসব সম্পর্ক বিয়েতে গড়ালেও, প্রতারণার অভিযোগও বাড়ছে। বিদেশফেরত নারীরা সাধারণত আর্থিক লেনদেন ও আবেগের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনায় সামাজিক সম্মানহানি ছাড়াও তাঁরা আইনি জটিলতায় পড়েন।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর ধুনট এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ফজলুল হক কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে পূর্বেও প্রতারণার অভিযোগ ছিল। তবে এত গুরুতর অভিযোগে তিনি প্রথমবার আইনের হাতে ধরা পড়লেন।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর পরিবার বলছেন, তাঁরা সামাজিকভাবে অপমানিত বোধ করছেন। তাঁরা ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

মানবাধিকার ও নারী সংগঠনের উদ্বেগ

নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, প্রবাসী নারীরা প্রায়ই বিয়ের প্রলোভনে প্রতারণার শিকার হন। তাঁদের মতে, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো এবং এ ধরনের মামলায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে নারীরা আরও ভিকটিম হবেন এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।

আইনি প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্য পরিণতি

আইনজীবীদের মতে, ভুক্তভোগীর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ফজলুল হকের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে আদালতে অভিযোগ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করা প্রয়োজন।
তাঁদের পরামর্শ, ভুক্তভোগীরা এসব সম্পর্কে জড়ানোর আগে যথেষ্ট সতর্ক থাকবেন এবং আইনি সহায়তা নেবেন।

সমাজে প্রভাব ও ভবিষ্যৎ করণীয়

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা সমাজে নারীর নিরাপত্তাহীনতা বাড়ায়। বিশেষ করে বিদেশফেরত নারীরা প্রতারণা ও শোষণের বড় শিকার হচ্ছেন। অনেকে আর্থিক ক্ষতি, অনেকে মানসিক নির্যাতন এবং কেউ কেউ সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে যাচ্ছেন।
তাঁরা মনে করেন, পরিবার ও সমাজের সহযোগিতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগই এ ধরনের অপরাধ কমাতে পারে।

বগুড়ার ধুনটে মুঠোফোনে শুরু হওয়া প্রেম এক নারীর জীবনে চরম দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। বিয়ের প্রলোভনে শুরু হওয়া সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ধর্ষণ মামলায় গড়িয়েছে। এখন দেখা যাক, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শেষে ভুক্তভোগী নারী কতটা ন্যায়বিচার পান।

এম আর এম – ১৩৫০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button