আঞ্চলিক

ভাঙ্গা ফরিদপুরে উত্তাল বিক্ষোভ: পুলিশ মসজিদে আশ্রয়, মহাসড়ক অবরোধ

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আজ সোমবার সকাল থেকে স্থানীয়রা পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে সড়কে নেমে পড়েন। বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, লাঠিসোঁটা বর্ষণ এবং মহাসড়কে অবরোধের কারণে পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙ্গা ঈদগাহ মসজিদে নিরাপত্তা নেওয়া পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

সড়কে হঠাৎ বিক্ষোভ, প্রশাসনের তৎপরতা ব্যর্থ

ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছিল প্রশাসন। কিন্তু দুপুরের দিকে স্থানীয়রা হঠাৎ করেই মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন। ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের অন্তত ছয়টি স্থানে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধের ফলে অর্ধশতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে, যাত্রী ও মালবাহী ট্রাকও দীর্ঘ সময় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে।

স্থানীয়রা বিদ্যুতের খুঁটি ও টায়ার ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। কয়েকশ বিক্ষুব্ধ জনতা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় রাইটকারের সাহায্যে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যদের মুখোমুখি অবস্থান দেখা যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা গোলচত্বর দখল করে রাখে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে।

পূর্বঘোষিত অবরোধ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা

গত শনিবার সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ এবং আলগী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে তিন দিনের অবরোধ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম.ম. সিদ্দিক মিয়া। তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা তাকে আটক করে।

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের উদাসীনতা এবং কিছু নির্দিষ্ট এলাকার সেবা বঞ্চনার কারণে তারা বাধ্য হয়ে এই অবরোধ শুরু করেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা হচ্ছে।

পুলিশ-মিলিটারি টহল, মসজিদে আশ্রয়

উত্তেজিত জনতার ভিড়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে। পুলিশের একাংশ ভাঙ্গা ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং জনতার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টা করছেন।

পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি শান্ত করতে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া, লাঠিসোঁটা ব্যবহার ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীও বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে।

যান চলাচল ব্যাহত, ব্যবসা ও দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত

অবরোধের কারণে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত সব রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বহু যাত্রী বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট যানবাহনে আটকে থাকে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দৈনন্দিন ক্রয়-বিক্রয় প্রভাবিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জরুরি চিকিৎসা ও শিক্ষাগত কাজের জন্যও সমস্যায় পড়ছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, “সকালে কোন যানবাহন চলছিল না। মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে। দোকানপাটও বন্ধ। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।”

সামাজিক প্রভাব ও জনমত

স্থানীয়রা সামাজিক মাধ্যমে এ পরিস্থিতির ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন। অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রশাসন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। আবার অনেকে বলছেন, আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো প্রাথমিকভাবে অবহেলিত হওয়ায় জনমনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

এক জন বিক্ষুব্ধ নাগরিক জানিয়েছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু পুলিশ ও পুলিশ বাহিনীর আচরণ আমাদের আরও উত্তেজিত করছে।”

প্রশাসনের পদক্ষেপ

ভাঙ্গা থানার ওসি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। সকাল থেকেই পুলিশের একটি বড় দল এবং এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিচ্ছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা অবরোধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রভাব

ভাঙ্গার এই উত্তেজিত পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কিছু এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় রাজধানী ঢাকায়ও সরাসরি প্রভাব পড়েছে।

পরিবহন মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, মহাসড়ক অবরোধের কারণে পরিবহন খাতের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রী পরিবহন এবং মালবাহী ট্রাকের লেনদেন স্থবির হয়ে গেছে।

বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অবরোধ এবং বিক্ষোভ মূলত স্থানীয় সমস্যা এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে বেড়ে উঠছে। তারা সতর্ক করেছেন, যদি অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এ ধরনের উত্তেজনা দ্রুত সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।

একজন বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক মন্তব্য করেছেন, “ভাঙ্গার পরিস্থিতি শুধু ফরিদপুরের নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য সতর্কতার বার্তা। প্রশাসনকে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।”

পরবর্তী পরিস্থিতি

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। রাতভর পুলিশের টহল এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বজায় থাকবে। স্থানীয়রা আশাবাদী যে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। প্রশাসনও ইতোমধ্যেই শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে।

নাগরিকরা অনুরোধ করছেন, অবরোধ ও উত্তেজনা যেন দ্রুত সমাধান হয়, যাতে দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সচল থাকে।

MAH – 12830  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button