পটিয়া মাদরাসার সদরে মুফতী আহমদ উল্লাহর জানাজা সম্পন্ন

চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থিত আল-জামিয়া পটিয়া মাদরাসার সদরে মুহতামিম ও বিশিষ্ট শায়খুল হাদীস মুফতী আহমদ উল্লাহ আর আমাদের মাঝে নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘ দিনের অসুস্থতার পর রবিবার সকাল ৬:৫৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হসপিটালে তিনি ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
মুফতী আহমদ উল্লাহ ছিলেন ইসলামী শিক্ষার একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি জীবনভর হাদীস শিক্ষা, মাদরাসার উন্নয়ন এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চায় নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি জামিয়া পটিয়ার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজকে পথপ্রদর্শক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
জানাজা ও শেষকৃত্য: হাজারো শিক্ষার্থী ও উলামায়ে কেরামের শোক
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার সময় পটিয়া মাদরাসার প্রাঙ্গণে মুফতী আহমদ উল্লাহর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন তাঁর মেজ ছেলে মাওলানা কমর উল্লাহ।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন মাদরাসার প্রধান ও মুহাদ্দিসরা। হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতী জসিম উদ্দিন, লালখান বাজার মাদরাসার মুহতামিম মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, নানুপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সালাহ উদ্দিন, চট্টগ্রাম মোজাহেরুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা লোকমান হাকীম, জিরি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা খোবাইব বিন তৈয়ব, এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজার হাজার উলামায়ে কেরাম, হজরতদের শিষ্যবৃন্দ ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীতে তাঁকে জামিয়ার কেন্দ্রীয় কবরস্থান মাকবারায়ে আযীযীতে দাফন করা হয়, যেখানে মুসলিম শিক্ষাবিদদের প্রথা অনুসারে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে সমাহিত করা হয়।
মুফতী আহমদ উল্লাহর জীবন ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান
মুফতী আহমদ উল্লাহ ছিলেন একজন নিবেদিত ইসলামি শিক্ষক ও খেদমতে হাদীসের অগ্রদূত। তিনি জীবনভর হাদীস শিক্ষার প্রচার ও গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন।
পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের নদভী তাঁর জীবন ও অবদানের স্মৃতিচারণ করে বলেন,
“মুফতী সাহেব দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে জামিয়া পটিয়ার হাদীস শিক্ষা কার্যক্রমে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় প্রতিনিয়ত সচেষ্ট ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
মুফতী সাহেবের নেতৃত্বে পটিয়া মাদরাসা শুধু চট্টগ্রামের নয়, সমগ্র দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং আন্তরিকতা শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
অসুস্থতা ও শেষ দিন
মুফতী আহমদ উল্লাহ দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হসপিটালে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, রবিবার সকাল ৬:৫৫ মিনিটে তিনি ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৬ বছর।
তাঁর মৃত্যুতে মুসলিম সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে তার মানবিক ও শিক্ষামূলক অবদান স্মরণ করছেন।
বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষার ইতিহাসে তাঁর স্থান
মুফতী আহমদ উল্লাহ শুধুমাত্র একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন ইসলামী শিক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর প্রজ্ঞা, নৈতিকতা, এবং আন্তরিকতা বহু শিক্ষার্থী ও সহকর্মীর জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
তার নেতৃত্বে পটিয়া মাদরাসা হাদীস শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা স্থাপন করেছেন।
শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা মুফতী সাহেবকে শুধুমাত্র শিক্ষক হিসেবেই নয়, বরং একজন পথপ্রদর্শক ও আত্মিক গুরুর মতো মনে রাখবেন। এক শিক্ষার্থী বলেন,
“মুফতী সাহেব আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, ধৈর্য্য এবং মানবিকতা শেখাতেন। তাঁর আদর্শ আমাদের জন্য চিরন্তন দিকনির্দেশ।”
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁকে মনে রেখে তারা ইসলামী শিক্ষা ও সমাজসেবায় অবদান রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
দেশের বিভিন্ন মাদরাসা ও উলামায়ে কেরামের শোক
মুফতী আহমদ উল্লাহর মৃত্যুতে দেশের বিভিন্ন মাদরাসা ও উলামায়ে কেরামের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হাটহাজারী, নানুপুর, লালখান বাজার, চট্টগ্রাম মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে শিক্ষাবিদ ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করেছেন।
তাঁর স্মরণে বিভিন্ন মাদরাসায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুসলিম সমাজে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
সমাপ্তি: একটি অবিস্মরণীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার উদাহরণ
মুফতী আহমদ উল্লাহর জীবন আমাদের শেখায়, শিক্ষা শুধুমাত্র বইপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষা হলো মানবিকতা, নৈতিকতা, সমাজসেবা এবং ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সংযুক্ত। তাঁর জীবন এক জীবন্ত উদাহরণ যে কীভাবে একজন শিক্ষক শুধু জ্ঞানই নয়, চরিত্র ও নৈতিকতার প্রতীক হতে পারেন।
আজ মুফতী সাহেব আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর শিক্ষা, আদর্শ ও জীবনচর্চা চিরকাল আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ইসলামী শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান এবং নিষ্ঠা চিরস্মরণীয়।
MAH – 12823 Signalbd.com