আঞ্চলিক

ডাকসু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ, প্রতিকার চেয়ে স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী আরাফাতের আবেদন

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন দেন আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী। আবেদনে তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অসঙ্গতি, দায়িত্বপ্রাপ্তদের পক্ষপাতিত্ব, প্রক্সি ভোট, পূর্বেই পূর্ণ করা ব্যালট পেপার, অস্বাভাবিক ভোটার উপস্থিতি এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। একইসঙ্গে ভোট প্রদানের সংখ্যা, পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবি জানান।

অভিযোগের বিস্তারিত

আবেদনে আরাফাত উল্লেখ করেন, ফলাফলে ইচ্ছাকৃতভাবে কারচুপি করা হয়েছে। তার ভাষায়, নির্বাচনী ফলাফল ‘একপক্ষীয়ভাবে সাজানো’ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, অনেক কেন্দ্রে আগে থেকেই ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে রাখা হয়েছিল, আবার অনেক ভোটার ভোট দিতে না পেরেও তাদের নামে ভোট প্রদান হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, “প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হলে অনিয়ম প্রমাণিত হবে। আমরা চাই এই নির্বাচনের ফলাফলে স্বচ্ছতা আসুক এবং প্রকৃত ভোটের প্রতিফলন ঘটুক।”

প্রার্থীর প্রেক্ষাপট ও জনপ্রিয়তা

গত কয়েক বছরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’ নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করে আলোচনায় আসেন আরাফাত চৌধুরী। এর ফলে ক্যাম্পাসে তার ব্যাপক পরিচিতি তৈরি হয়। নির্বাচনী প্রচারণাতেও তিনি অগ্রগামী ছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমর্থন পেয়েছিলেন।

তবে চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, ৪ হাজার ৪৪ ভোট পেয়ে তিনি চতুর্থ স্থানে অবস্থান করেন। এ ফলাফলের পরই তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছেন যে প্রকৃত সমর্থনকে প্রতিফলিত করা হয়নি।

ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই বাংলাদেশে আলোচিত এবং বিতর্কিত হয়ে থাকে। বহু বছর পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে অংশ নেন। তবে এবারের নির্বাচনে ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই বিজয়ী হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’।

এমন ফলাফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে। সম্পাদকীয় পদে স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হওয়া দুজন প্রার্থীর প্রতিও শিবিরের সমর্থন ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে।

প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব

আরাফাতের অভিযোগ ঘিরে ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, যদি এসব অভিযোগ সত্য হয় তবে ডাকসুর ইতিহাসে আরেকটি বড় বিতর্ক যোগ হবে। অন্যদিকে বিজয়ী প্যানেলের সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচনে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়েছে এবং অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন তাকিয়ে আছে, নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেবে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে ভবিষ্যতের ছাত্র রাজনীতির ওপর তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মত দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে তা গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য ভালো বার্তা নয়। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “ডাকসু নির্বাচন ছাত্রদের গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম ক্ষেত্র। এখানে অনিয়মের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।”

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

আরাফাতের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। তা না হলে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অসন্তোষ দীর্ঘস্থায়ী হবে।

ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়, তবে স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী আরাফাত চৌধুরীর সাম্প্রতিক আবেদনে তা আবারও আলোচনায় এসেছে। এখন সবার নজর নির্বাচন কমিশনের দিকে—তারা অভিযোগের প্রতিকার করবে, নাকি বিষয়টি উপেক্ষিত হয়ে যাবে? শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, সত্য উদঘাটিত হোক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চায় আস্থা ফিরুক।

এম আর এম – ১৩৪০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button