আঞ্চলিক

আশুলিয়ায় একই পরিবারের ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার

রোববার রাতে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর এলাকায় তালাবদ্ধ একটি কক্ষ থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন রুবেল আহমেদ (৩৫), তার স্ত্রী সনি আক্তার (২৮) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে জমিলা। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।

ঘটনাস্থলের বিবরণ

পুলিশ জানায়, সন্ধ্যার পর থেকে ওই পরিবারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিবেশীরা ঘরে তালা দেখে সন্দেহ প্রকাশ করলে খবর দেয় থানায়। পরে পুলিশ এসে ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিনজনের মরদেহ দেখতে পায়।

নিহতদের লাশ প্রাথমিকভাবে বাসার মেঝেতে পড়ে ছিল। শিশুটি ও তার মায়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার পর রুবেল আত্মহত্যা করেছেন।

নিহতদের পরিচয় ও পারিবারিক তথ্য

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুবেল পেশায় একটি পোশাক কারখানার কর্মচারী ছিলেন। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি এই বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, রুবেল ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

মৃত সনি আক্তার একজন গৃহিণী ছিলেন। দম্পতির একমাত্র সন্তান জমিলা স্থানীয় একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।

পুলিশের বক্তব্য

আশুলিয়া থানার অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, “আমরা স্থানীয়দের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং তালাবদ্ধ ঘর ভেঙে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করি। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, রুবেল পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সঠিক কারণ বলা সম্ভব নয়।”

পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, দুপুরে শেষবার তারা পরিবারটিকে দেখেছিলেন। পরে রাতে ঘর থেকে কোনো শব্দ না আসায় সন্দেহ হয়।

প্রতিবেশী মো. কামাল বলেন, “তারা খুব সাধারণ পরিবার ছিল। তবে মাঝে মাঝে ঝগড়ার শব্দ আমরা শুনতাম। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে তা কল্পনাও করিনি।”

বাংলাদেশে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও আর্থিক সমস্যাজনিত কারণে এ ধরনের ঘটনার নজির নতুন নয়। গত কয়েক মাসে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু একই রকম মর্মান্তিক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পারিবারিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক চাপ, পারিবারিক কলহ এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অভাবই এই ধরনের ঘটনার প্রধান কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা সুলতানা বলেন, “বাংলাদেশে পরিবারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা আর্থিক সংকটে বা মানসিক চাপে স্ত্রী ও সন্তানকে টার্গেট করছে। আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য না হওয়ায় এর ফলশ্রুতিতে মর্মান্তিক পরিণতি দেখা দিচ্ছে।”

ঘটনার সামাজিক প্রভাব

এ ধরনের ঘটনা সমাজে আতঙ্ক ছড়ায় এবং মানসিকভাবে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনকে প্রভাবিত করে। স্থানীয়দের মধ্যে শোকের আবহ বিরাজ করছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের পারিবারিক সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা রাখা জরুরি।

আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের ট্র্যাজেডিই নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য এক গভীর সতর্কবার্তা। পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক সমস্যার সঠিক সমাধান না হলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই পারে। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, ভবিষ্যতে আমরা কি এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারব?

এম আর এম – ১৩৩০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button